মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’-এর অনিয়ম ও জালিয়াতি খুঁজে বের করতে ফরেনসিক অডিট বা নিরীক্ষা করা হবে।
রোববার (১০ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্ষদ সভায় বিষয়টি অনুমোদন হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মুখপাত্র জানান, আজ বোর্ড ছিল। বেশ কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে। পর্ষদ সভার অ্যাজেন্ডায় এক নম্বর ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অডিট কমিটি পুনর্গঠন; এখানে নজরুল হুদার পরিবর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাশেদ আল আহমেদ তিতুমীরকে যুক্ত করা হয়েছে।
এ ছাড়া ডেপুটি গভর্নর ড. হাবিবুর রহমান, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেককে অন্তর্ভুক্ত করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। টাস্ক ফোর্সের কার্যপরিধি অনুমোদন হয়েছে, বেক্সিমকো গ্রুপের রিট পিটেশনের বিষয়টি পর্ষদে জানানো হয়েছে, আন্তর্জাতিক আইন যাচাই রিকভারি সংস্থা নিয়োগের বিষয়টি অনুমোদন হয়েছে এবং নগদে ফরেনসিক অডিট করার বিষয়টি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এর আগে নগদ-এ বাংলাদেশ ব্যাংকের নিযুক্ত প্রশাসক অনিয়ম খুঁজে বের করতে ফরেনসিক নিরীক্ষা করার জন্য ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চিঠি দিয়েছিলেন। এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ডাক অধিদপ্তরের আলোচনা হয়। দুই পক্ষ একমত হওয়ায় ফরেনসিক নিরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত হয়। যা আজ বোর্ড সভায় অনুমোদন হয়েছে। এখন নিয়ম অনুযায়ী ডাক অধিদপ্তর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তালিকাভুক্ত কোনো নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেবে, যারা নগদের প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত সব কাজের ফরেনসিক নিরীক্ষা করবে।
ফরেনসিক নিরীক্ষা কী?
ফরেনসিক নিরীক্ষা হলো কোনো প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনের বিস্তারিত তথ্য খতিয়ে দেখা। প্রতিষ্ঠানটিতে যদি কোনো জালিয়াতি বা অনিয়ম হয়ে থাকে তবে এ নিরীক্ষার মাধ্যমে খুঁজে বের করা সম্ভব। সাধারণত এ নিরীক্ষায় কোনো অনিয়ম ধরা পড়লে তা আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যবহার করা হয়।
বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ক্ষমতার অপব্যবহার করে শুরু হয় নগদের কার্যক্রম। এরপর গ্রাহক ধরতে প্রতিষ্ঠানটি একচেটিয়া সুবিধা ভোগ করে। বিদায়ী সরকার সব সরকারি ভাতা বিতরণের জন্য নগদকে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
ফলে সরকারি ভাতা ভোগীদের বাধ্য হয়ে নগদের গ্রাহক হতে হয়। নগদকে ডাক বিভাগের সেবা বলা হলেও বাস্তবে এতে সরকারি বিভাগটির কোনো মালিকানা বা নিয়ন্ত্রণ নেই।
নগদের মালিকানার সঙ্গে যুক্ত আওয়ামী লীগের প্রভাবশালীরা। ফলে বিদায়ী সরকারের সময়ে কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থাই তাদের কোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। নগদের মালিকানার সঙ্গে বিভিন্ন সময় যুক্ত ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকনের স্ত্রী রেজওয়ানা নূর, সাবেক সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক ও রাজী মোহাম্মদ ফখরুল।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এর পর ২১ আগস্ট ‘নগদ’কে পরিচালনা করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়। পরদিন ২২ আগস্ট প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালক মুহম্মদ বদিউজ্জামান দিদারকে প্রশাসক এবং ছয় জন কর্মকর্তাকে ‘সহায়ক কর্মকর্তা’ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
নগদের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) তানভীর আহমেদ, নির্বাহী পরিচালক নিয়াজ মোর্শেদ ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মারুফুল ইসলাম দায়িত্বে নেই। তারা প্রত্যেকেই নগদের মালিকানার সঙ্গেও যুক্ত। তবে আগের কর্মকর্তারা সবাই বহাল রয়েছেন।