সিরিয়াল মেনে রোগী দেখছেন না চিকিৎসক। ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদ করে রোগী। আর এতে তার উপর চড়াও হয়ে কান ধরে ওঠবস করালেন সেই চিকিৎসক। শনিবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে সাতক্ষীরা শহরের কাটি আমতলায় ডা. ফয়সাল আহমেদের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত ডাক্তার ফয়সাল আহমেদ বেসরকারি হাসপাতাল হার্ট ফাউন্ডেশন অ্যান্ড ইনটেনসিভ কেয়ারের পরিচালক ও সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও)। আর ভুক্তভোগী বিউটি বেগম (৫৫) সাতক্ষীরা কলারোয়া থানার শাকদাহ এলাকার মোকাজ্জেল হোসেনের স্ত্রী।
এরইমধ্যে এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
জানা গেছে, গত ৮ নভেম্বর হার্ট ফাউন্ডেশনে ডাক্তার দেখাতে সিরিয়াল দেন বিউটি বেগম। পরদিন ৯ নভেম্বর দুপুরে চিকিৎসা নিতে প্রথমে হার্ট ফাউন্ডেশনে গেলে সেখানকার কর্মকর্তারা চিকিৎসক ফয়সাল আহমেদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। সেখানে দীর্ঘ সময় সিরিয়াল থাকার পর তিনি দেখেন সিরিয়াল ভেঙে অনিয়ম করা হচ্ছে।
অভিযোগ করে বিউটি বেগম বলেন, ডাক্তারের চেম্বারে গিয়ে সমস্যার কথা বলার পর চিকিৎসক আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে এলোপাতাড়ি কিলঘুষি চড় থাপ্পড় মারতে থাকেন। পরে মাথার চুলের মুঠি ধরে টানা হেঁচড়া করে পা থেকে জুতা খুলে আমার চোখে, মুখে, কানে ও মাথায় মারেন। এ সময় উপস্থিত রোগীদের সামনে আমাকে কান ধরে ওঠবস করান।
তিনি বলেন, আমার মেয়ে মারধর থামাতে গেলে ডাক্তার তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে মারধর করেন। এমনকি শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানি ঘটান।
মাকে বাঁচাতে গিয়ে শ্লীলতাহানির শিকার ওই তরুণী বলেন, আম্মুর ওখানে গিয়ে দেখি তাকে চুলের মুঠো ধরে নিচে নামিয়ে ফেলেছে। আমি বাঁচাতে গেলে আমাকেও মারধর করে খারাপ স্পর্শ করেছে। এ সময় ডাক্তার আমাকে ও আম্মুকে জুতা দিয়ে পিটিয়েছে।
ডাক্তার আম্মুকে বলছে- তুই এখানে তিনবার সরি বলবি আর কান ধরে ওঠবস করবি।
আম্মু বলছে- আমি তো কোনো অন্যায় করিনি কেন সরি বলবো, কান ধরে ওঠবস করবো। এ কথা বললেই আবার আম্মুকে জুতা দিয়ে মুখে বাড়ি মেরেছে। ডাক্তার লাথি মেরে বলেছে- এই ভিখারি বাচ্চারে এখান থেকে সরা। ঘাড় ধরে এখান থেকে বের করে দে।
তিনি আরও বলেন, এ সময় আমি ফোনে ভিডিও করলে আমার ফোন কেড়ে নিয়ে রিসেট দিয়ে দেয়। পরে আমার মুখের উপর ফোন ছুড়ে মারে। পরে ডাক্তারের নির্দেশে আল আমিন নামে এক কর্মচারী আমাদের ঘাড় ধরে বের করে দেন।
এবে এসব বিষয়ে জানতে হার্ট ফাউন্ডেশন অ্যান্ড ইনটেনসিভ কেয়ারের পরিচালক ও সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. ফয়সাল আহমেদের মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি।
সাতক্ষীরা সদর থানার ওসি মো. শামিনুল ইসলাম বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তবে দুপক্ষ একে অপরের সঙ্গে মীমাংসার চেষ্টা করছে বলে শুনেছি।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. মো. আব্দুস সালাম বলেন, লোকমুখে এমন ঘটনা শুনেছি। তবে আমাদের কাছে এ ধরনের কোনো অভিযোগ আসেনি। কেউ অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।