ইউক্রেনে যুদ্ধের অবসান এবং রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি সংলাপ শুরু করার জন্য ইউক্রেন বিষয়ক বিশেষ দূত নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার মার্কিন টিভি চ্যানেল ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানিয়েছেন তিনি।
সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, “আপনার শিগগিরই ইউক্রেন বিষয়ক একজন জ্যেষ্ঠ বিশেষ দূতকে দেখতে পাবেন; এমন একজন, যার ওপর আমরা আস্থা রাখতে পারি। তার মূল দায়িত্ব হবে এই যুদ্ধের একটি সমাধান খোঁজা এবং (রাশিয়া ও ইউক্রেন) উভয়পক্ষকে শান্তি সংলাপের টেবিলে নিয়ে আসা।”
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়েছে। সেই নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য ব্যবধানে প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেটিক পার্টি এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিসকে পরাজিত করে বিজয় অর্জন করেছেন ট্রাম্প, যিনি ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেবেন ট্রাম্প। তবে নির্বাচনে জয় নিশ্চিত হওয়ার পর থেকেই তার নেতৃত্বাধীন নতুন প্রশাসনের বিভিন্ন পদ ও দায়িত্বে যারা থাকবেন তাদের নাম ঘোষণা করছেন তিনি। ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূতের নামও প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প।
তবে নতুন মার্কিন প্রশাসনে কে ইউক্রেন বিষয়ক বিশেষ দূত হতে যাচ্ছেন— ফক্স নিউজের সাক্ষাৎকারে সে সম্পর্কিত কোনো ইঙ্গিত দেননি ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান না করা এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য তদবিরের জেরে কয়েক বছর টানাপোড়েনের পর গত ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রুশ বাহিনী, যা এখনও চলছে। প্রেসিডেন্ট পুতিন নিজে এই অভিযানের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ অভিযানে গত প্রায় তিন বছরে উভয়পক্ষের হাজার হাজার সামরিক-বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন।
২০২৩ সালে মস্কো একাধিকবার ইঙ্গিত দিয়েছে যে কিয়েভ শান্তি সংলাপে আসলে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান বন্ধ করবে রুশ বাহিনী; কিন্তু ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন যে পুতিনের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের সঙ্গে কোনো প্রকার সংলাপে যাবে না কিয়েভ। এই মর্মে প্রেসিডেন্সিয়াল ডিক্রিও জারি করেছেন তিনি।
এদিকে ইউক্রেনে যখন অভিযান শুরু করে রুশ বাহিনী, সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা জো বাইডেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বাঁধার পর বাইডেন প্রশাসন দ্ব্যর্থহীনভাবে ইউক্রেনের সমর্থনে দাঁড়িয়ে যায় এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে শত শত নিষেধাজ্ঞা জারির পাশাপাশি ইউক্রেনে কোটি কোটি ডলার সহায়তা প্রদান করতে থাকে। গত প্রায় তিন বছরে হাজার হাজার কোটি ডলার ইউক্রেনকে সহায়তা দিয়েছে ওয়াশিংটন।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প শুরু থেকেই এ যুদ্ধে ওয়াশিংটনের অর্থ সহায়তা নিয়ে কঠোর সমালোচনা করে আসছেন। সেই সঙ্গে একাধিকবার তিনি বলেছেন যে তিনি প্রেসিডেন্ট হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ যুদ্ধ থামিয়ে দেবেন।
ফক্স নিউজকে ট্রাম্প জানান, গত সপ্তাহে জেলেনস্কির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন তিনি। শিগগিরই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে একটি বিস্তৃত বৈঠকের ইচ্ছেও রয়েছে তার।