আন্তর্জাতিক মর্যাদাপূর্ণ মঙ্গলযান প্রতিযোগিতা ‘ইন্টারন্যাশনাল রোভার চ্যালেঞ্জ ২০২৫’- এর চূড়ান্ত পর্বে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) ‘টিম অগ্রদূত’।
প্রতিযোগিতার প্রাথমিক পর্বে উত্তীর্ণ হয়ে সারাবিশ্বের মোট ৩১টি দল এবার ভারতের গোয়ার ‘ইন্টারন্যাশনাল রোভার চ্যালেঞ্জ ২০২৫’- এর চূড়ান্ত পর্বে অংশগ্রহণ করছে।
২০২৫ সালের ২৮ জানুয়ারি থেকে গোয়ার বিরলা ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সের (বিআইটিএস) কে কে বিরলা ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হবে প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব। এতে বাংলাদেশ থেকে রুয়েটের ‘টিম অগ্রদূত’-এর পাশাপাশি সুযোগ পেয়েছে মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) ‘মঙ্গল বারোতা’ এবং ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) ‘প্রজেক্ট অল্টেয়ার’।
‘টিম অগ্রদূত’ প্রথম রাউন্ডে বিশ্বব্যাপী সব দলকে নিজেদের প্রজেক্টের ওপর একটি লিখিত রিপোর্ট ও একটি ভিডিও রিপোর্ট জমা দিতে হয়েছে, যা চূড়ান্ত পর্বে মূল্যায়নের সঙ্গে যোগ হবে।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিম অগ্রদূতের টিম লিড ও মেকানিক্যাল লিড এস এম শাফায়েত জামিল বলেন, ‘ইন্টারন্যাশনাল রোভার চ্যালেঞ্জের মতো একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় দেশের প্রতিনিধিত্ব করা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। আমাদের টিমের উদ্ভাবনী চিন্তা এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা আন্তর্জাতিক মানচিত্রে বাংলাদেশের অবস্থানকে আরও সুসংহত করবে। আমরা প্রতিটি ধাপে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে দেশের সুনাম বৃদ্ধি করার জন্য কাজ করছি। সবার সহযোগিতা ও দোয়া আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’
উল্লেখ্য, টিম অগ্রদূত গত বছর আরেকটি মর্যাদাপূর্ণ ইভেন্ট ‘ইন্টারন্যাশনাল রোভার ডিজাইন চ্যালেঞ্জ (আইআরডিসি) ২০২৩’-এ বাংলাদেশি দল হিসেবে অংশ নিয়ে সারাবিশ্বে ১১তম স্থান অর্জন করে। এছাড়াও দলটি নিয়মিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রোভার প্রতিযোগিতাগুলোয় অংশগ্রহণ করে সাফল্য বয়ে আনছে।
টিম অগ্রদূত-এর কো-লিড ও টিম ম্যানেজার জুবায়ের আহমেদ বলেন, ‘আমাদের টিম অগ্রদূত-এর সদস্যরা নিবিড় পরিশ্রম ও উদ্ভাবনী চিন্তাধারার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের গৌরব উজ্জ্বল করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। ইন্টারন্যাশনাল রোভার চ্যালেঞ্জের মতো প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমরা প্রযুক্তি ও গবেষণায় বাংলাদেশের সক্ষমতাকে তুলে ধরতে চাই। এ ক্ষেত্রে টেকনিক্যাল রিসোর্স আর ফান্ডিং সুবিধা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। দেশের বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কিংবা সরকারি খাত থেকে আর্থিক সহায়তা পেলে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাগুলোয় আমাদের অবস্থান আরও উন্নত করা সম্ভব।’
প্রতি বছর স্পেস রোবটিক সোসাইটি (এসপিআরএসও) এ মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। উদ্ভাবনের এ লড়াইয়ে অংশ নেয় বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মেধাবী তরুণ শিক্ষার্থীরা।
এবারের আসরের চূড়ান্ত পর্ব ২০২৫ সালের ২৮ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে।
ইন্টারন্যাশনাল রোভার চ্যালেঞ্জে নিজেদের তৈরি রোবটযান বা রোভার নিয়ে অংশগ্রহণ করতে হয়। সেখানে মার্সের আদলে তৈরি করা ২০ হাজার বর্গমিটার এক জায়গায় (সিমুলেশন) চারটি মিশন সম্পন্ন করতে হয় প্রতিযোগীদের। ভারবহন করা, বৈজ্ঞানিক ও গাণিতিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ, রক্ষণাবেক্ষণ, স্বয়ংক্রিয় অভিযানসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে পারফরম্যান্স বিবেচনা করা হয়। একইসঙ্গে প্রজেক্টের ম্যানেজমেন্ট, প্রদর্শনী ইত্যাদি ও প্রাথমিক পর্বের ১০০০ পয়েন্টসহ সর্বমোট ২০০০ পয়েন্টের ওপর মূল্যায়ন সম্পন্ন হবে। গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণরা এতে অংশ নিয়ে সাফল্য অর্জন করছেন এবং দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনছেন।