পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) লাখ লাখ সমর্থক বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাজধানী ইসলামাবাদে উপস্থিত হয়েছিলেন। এই বিক্ষোভের মাধ্যমে তারা ইমরান খানের মুক্তি এবং দলের নানা দাবি প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের প্রতি তীব্র প্রতিবাদ জানান।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) তার মুক্তির দাবিতে পিটিআই সমর্থকদের একটি বিশাল বহর ইসলামাবাদের ডি-চক এলাকায় পৌঁছায়।
তবে, সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়, যার ফলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে এবং কিছু হতাহতের খবর পাওয়া যায়।
পিটিআইয়ের এই বিক্ষোভের মূল দাবি ছিল ইমরান খানসহ অন্যান্য রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি, ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে পিটিআইয়ের ‘ছিনিয়ে নেওয়া’ ম্যান্ডেট পুনরুদ্ধার এবং বিচার বিভাগের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ বাতিল করা।
বিক্ষোভকারীরা এসব দাবি নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল, তবে সরকার তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের দাবিকে প্রত্যাখ্যান করে এবং বিক্ষোভ দমনের জন্য কাঁদানে গ্যাস ও অন্যান্য শক্ত পদক্ষেপ নেয়।
এখন প্রশ্ন উঠেছে পিটিআই পরবর্তী পদক্ষেপ কী নেবে? বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকারের কঠোর দমনপীড়ন এবং বিক্ষোভের পরিণতি দলের জন্য একটি বড় রাজনৈতিক ধাক্কা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলের দাবি পূরণ হয়নি এবং এখন তাদের সংগঠিত হওয়ার কৌশল নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এরই মধ্যে, পিটিআই নেতা বুশরা বিবি ও আলি আমিন গান্দাপুরের সরে যাওয়ার ঘটনাও দলের অভ্যন্তরে বিভাজন সৃষ্টি করতে পারে, যা দলের শক্তি এবং নেতৃত্বের ওপর সন্দেহ তৈরি করেছে। এটি পিটিআইয়ের চার মাসে চতুর্থ বিক্ষোভ এবং পূর্ববর্তী বিক্ষোভগুলোও সফল হয়নি। এ থেকে বোঝা যায়, দলটি এখন নতুন কৌশল তৈরি করতে চাচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা পরামর্শ দিচ্ছেন, পিটিআইকে এখন অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোট গঠন করে জাতীয় সমস্যা নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার প্রয়োজন হতে পারে। মানবাধিকার ও সামাজিক ইস্যু সামনে রেখে একটি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন দলটির রাজনৈতিক কৌশল পুনরুদ্ধারে সহায়ক হতে পারে।
এদিকে, পিটিআইয়ের বিরুদ্ধে সরকার বারবার দাবি করেছে, তাদের সমর্থকরা সশস্ত্র ছিলেন এবং সহিংসতা সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের মুখপাত্র বলেছেন, বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ ছিল না, বরং একটি সহিংস অভিযানের অংশ ছিল। এই অভিযোগগুলো দলের জনগণের প্রতি সহানুভূতির দাবি এবং আন্দোলনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
সর্বোপরি, পিটিআই এখন কঠিন সময় পার করছে। দলটির সামনে দুটি প্রধান চ্যালেঞ্জ রয়েছে একটি, কিভাবে তারা ইমরান খানের মুক্তির জন্য আন্দোলনকে নতুনভাবে সংগঠিত করবে। দ্বিতীয়ত, কীভাবে তারা সরকার এবং দেশের জনগণের মধ্যে আরও সমর্থন তৈরি করবে। এ পরিস্থিতিতে দলটির কৌশল পুনর্বিবেচনা করাও জরুরি, যাতে তারা একটি কার্যকর এবং জাতীয়ভাবে গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক অবস্থান নিতে পারে।