চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্যদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত ব্যবস্থাপনা কমিটি ভেঙে দেওয়া এবং জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী কমিটি গঠন কেন অবৈধ নয়—এ মর্মে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট।
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায়ের দ্বৈত বেঞ্চ এ রুল জারি করেছেন। আগামী ৫ ডিসেম্বর রুলের চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমসহ তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন অপর দুই কর্মকর্তাকে রুলের জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, কোনো ধরনের যৌক্তিক কারণ ছাড়া গত ৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের নির্বাচিত ব্যবস্থা কমিটি ভেঙে দেওয়ার আদেশ জারি করেন। এরপর গত ১৩ নভেম্বর চার সদস্যের একটি অন্তর্বর্তী কমিটি গঠন করা হয়। সেখানে জেলা প্রশাসক নিজেই কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব নেন। জেলা প্রশাসকের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে দফায় দফায় লিখিতভাবে প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি তার নির্দেশ প্রত্যাহার করার কথা বলা হলেও রহস্যজনক কারণে তিনি এতে কর্ণপাত করেননি বলে জানান চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের নির্বাচিত কমিটির নেতারা।
পরে ক্লাবের পক্ষ থেকে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সালাহউদ্দিন মো. রেজা হাইকোর্টে রিট মামলা দায়ের করেন। রিটের চতুর্থদফা শুনানি শেষে হাইকোর্টের দ্বৈতবেঞ্চ বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) জেলা প্রশাসকসহ ৩ বিবাদীর বিরুদ্ধে রুল জারি করেন। এ রুলের চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্ট আগামী ৫ ডিসেম্বর আদেশের দিন ধার্য করেছেন।
শুনানিতে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের পক্ষে অংশ নেওয়া ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, সিনিয়র আইনজীবী সৈয়দ মেজবাহুল আনোয়ার, ব্যারিস্টার হারুনুর রশীদ এবং রাষ্ট্রপক্ষে অতিক্তি এর্টনি জেনারেলসহ ডিএজি ও এএজিরা অংশ নেন। শুনানি শেষে হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বলেন, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের কমিটি ভেঙে দেওয়া এবং অন্তর্বর্তী কমিটি গঠন কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না একসপ্তাহের রুল দিয়ে আগামী ৫ ডিসেম্বর শুনানির জন্য ধার্য করেছেন।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের নির্বাচন হয় দুই বছর মেয়াদি। সে মেয়াদ আগামী ৩১ ডিসেম্বর শেষ হবে। তার আগেই খুব সম্প্রতি এ কমিটি অবৈধ এবং অন্যায়ভাবে ভেঙে দেওয়া হয়। চট্টগ্রামের ডিসি কোনরকম শোকজ ছাড়াই কমিটি ভেঙে দিয়েছেন, যেটা তাদের কোনো জুরিসডিকশনে নেই। সে কমিটি ভাঙার আদেশের বিরুদ্ধে আমরা হাইকোর্টে রিট ফাইল করি। এতে সরকার পক্ষ হাজির হয়। শুনানিতে আদালত বলেছেন, এটা আপনারা জুরিসডিকশনের বাইরে করেছেন।
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট সরকার পটপরিবর্তনের সুযোগে একদল বহিরাগত চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এ সময় ক্লাবের কয়েক সদস্য মারধরের শিকারও হন। পরবর্তী সময়ে ক্লাবে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। এ অচলাবস্থা নিরসনের কথা উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক ক্লাবের নির্বাচিত ব্যবস্থা কমিটি ভেঙে দেওয়া এবং পরবর্তী সময়ে নিজেকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের একটি অন্তর্বর্তী কমিটি গঠনের অফিস আদেশ জারি করেন। এসব আদেশ অন্যায়, অবৈধ, রাষ্ট্রীয় বিধিবিধান বহির্ভুত দাবি করে ক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির পক্ষ থেকে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে অবহিত করার পর রিট মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত হয়।