২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ৮৪টি মামলা হয়। এর মধ্যে ৬৩টি মামলাই মানহানির। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর একে একে মামলার দায় থেকে মুক্ত হচ্ছেন তারেক।
রোববার (১ ডিসেম্বর) খালাস পেয়েছেন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা থেকে।
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের রেহাই পাওয়াকে ন্যায়বিচার হিসেবে উল্লেখ করছেন দলটির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।
তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, তার বিরুদ্ধে এখনো চারটি মামলা বাকি আছে। মামলাগুলো হলো- জিয়া অরফ্যানেজ ট্রাস্ট মামলা, সম্পদ বিবরণীর মামলা, মানি লন্ডারিং মামলা ও নড়াইলে মানহানির একটি মামলা। এসব মামলাতেও তিনি আইনি মোকাবিলা করতে চান। কারণ তারেক রহমান আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রমাণ হয়েছে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তারেক রহমানকে এসব মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছিল।
২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর গ্রেপ্তার হন তারেক রহমান। সেনা নিয়ন্ত্রিত সেই সরকার আমলেই পরের বছর জামিনে মুক্তি পেয়ে সপরিবারে দেশ ছাড়েন। তারপর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তারেক রহমান আর দেশে ফেরেননি। এর মধ্যে তার বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা বাড়তে থাকে, রায়ও হতে থাকে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা
২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন। এ মামলায় অভিযোগ ছিল, এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে পাওয়া ২ কোটি ১০ লাখ টাকার বেশি অর্থ ট্রাস্টের কাজে ব্যবহার করা হয়নি। বরং সেই টাকা নিজেদের হিসাবে জমা রাখার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। একইসঙ্গে তারেক রহমানসহ অন্য পাঁচ আসামিকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। মামলাটি বর্তমানে আপিল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে। এ মামলায় তারেক রহমানকে ২০০৮ সালের ৭ মার্চ গ্রেপ্তার করা হয়। ২০০৯ সালের ৩র সেপ্টেম্বর মুক্তি পেয়ে লন্ডন যান তিনি।
সম্পদ বিবরণীর মামলা
২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তারেক রহমান, তার স্ত্রী জুবাইদা রহমান ও জুবাইদা রহমানের মা সৈয়দা ইকবাল বানুর বিরুদ্ধে মামলাটি করেছিল দুদক। তাদের অভিযোগ, তারেক রহমান ও তার স্ত্রীর ঘোষিত আয়ের বাইরেও ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকারও বেশি পরিমাণ অর্থের অবৈধ সম্পদ রয়েছে। ২০২৩ সালের ২র আগস্ট এ মামলায় তারেক রহমানকে ৯ বছরের এবং তার স্ত্রী জুবাইদা রহমানকে ৩ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
মানহানির মামলা
২০১৪ সালে লন্ডনে এক সমাবেশে শেখ মুজিবুর রহমানকে রাজাকার ও পাকবন্ধু উল্লেখ করে তারেক রহমান নানা অবমাননাকর কটূক্তি করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। এসব অভিযোগ এনে নড়াইলে তার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান বিশ্বাস। ওই মামলায় ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তারেক রহমানকে দুবছরের কারাদণ্ড দেন নড়াইলের আদালত।
মানিলন্ডারিং মামলা
২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর তারেক রহমানকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে অর্থপাচার মামলায় ৭ বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালত। রায়ে কারাদণ্ডের পাশাপাশি মামুনকে ৪০ কোটি টাকা জরিমানাও করা হয়। পাচারকৃত ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৬১৩ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করারও নির্দেশ দেন আদালত।