নিজের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী ২০ জানুয়ারি দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন রিপাবলিকান এই নেতা।
তবে শি জিনপিং আগামী মাসে ইউএস ক্যাপিটলের পাদদেশে ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন কিনা তা এখনও নিশ্চিত নয়। শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানুয়ারিতে তার অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। চীন নিয়ে বিভিন্ন সময়ে উস্কানিমূলক বক্তব্য এবং শুল্ক আরোপের মতো হুমকির ইতিহাস সত্ত্বেও এই আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার ট্রাম্পের অন্তর্বর্তীকালীন প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট রক্ষণশীল টিভি চ্যানেল ফক্স নিউজে হাজির হয়ে জিনপিংকে আমন্ত্রণের খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি এই আমন্ত্রণকে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করার প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে নেওয়া পদক্ষেপ বলেও উল্লেখ করেছেন। বৈশ্বিক পরাশক্তি এই দেশ দুটিকে দীর্ঘদিন ধরেই একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে দেখা হয়ে থাকে।
ক্যারোলিন লেভিট ফক্স নিউজকে বলেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিসকে পরাজিত করার পরপরই নভেম্বরের শুরুতে জানানো ট্রাম্পের আমন্ত্রণ শি জিনপিং গ্রহণ করবেন কিনা তা এখনো “নির্ধারণ করা হয়নি”।
এছাড়া জিনপিংয়ের পাশাপাশি শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অন্যান্য বিশ্বনেতাদের আমন্ত্রণ জানানোর কথা বলা হলেও ক্যারোলিন লেভিট আমন্ত্রিত অন্য বিশ্ব নেতাদের নাম উল্লেখ করেননি।
তবে লেভিট বলেন, আগামী ছয় সপ্তাহের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া দুপুরের এই উন্মুক্ত স্থানের অনুষ্ঠানে ট্রাম্পের দেওয়া আমন্ত্রণ “এমন দেশ যারা কেবল আমাদের মিত্র নয়, আমাদের প্রতিপক্ষ এবং প্রতিযোগীও তাদের নেতাদের সাথে খোলামেলা সংলাপ তৈরির একটি উদাহরণ। তিনি যে কারও সাথে আলোচনায় বসতে ইচ্ছুক এবং তিনি সবসময় আমেরিকার স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেবেন।”
সংবাদমাধ্যম বলছে, আমন্ত্রণ অনুযায়ী শি জিনপিং যদি ওয়াশিংটন সফর করেন তাহলে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির এই দুই দেশের নেতাদের বিতর্কিত বাণিজ্য ও সামরিক ইস্যু নিয়ে আলোচনার প্রথম সুযোগ তৈরি হতে পারে।
উল্লেখ্য, গত ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আবারও বিজয়ী হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর এর মাধ্যমে দেশটির প্রায় আড়াইশো বছরের ইতিহাসে দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে এক মেয়াদের বিরতিতে দ্বিতীয়বারের মতো হোয়াইট হাউসে ফিরতে চলেছেন সাবেক এই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট।
অবশ্য নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জিতলেও ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন আগামী বছরের ২০ জানুয়ারি। তবে এর আগেই নিজের প্রশাসন সাজানোর পাশাপাশি পররাষ্ট্রসহ বিভিন্ন ইস্যুতে একেকর পর এক বক্তব্য দিয়ে চলেছেন তিনি।
সম্প্রতি ট্রাম্প আংশিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ফ্যানটানিলের মারাত্মক প্রবাহ রোধ করতে এবং চীনে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বিক্রয় বাড়ানোর জন্য চাপ দেওয়ার উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রে চীনা রপ্তানির ওপর বিশাল শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন।
এছাড়া শপথ গ্রহণের প্রাক্কালে জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম টিকটকের চীনা মূল কোম্পানি বাইটড্যান্সকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অ্যাপটি বিক্রি করতে বা যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
নিষেধাজ্ঞা আটকাতে টিকটক গত সপ্তাহে প্রচেষ্টা চালালেও তাতে তারা হেরে গেছে। তবে সুপ্রিম কোর্টে মামলাটির আপিল করা হয়েছে।