গাজীপুরের টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে মাওলানা সাদ ও জুবায়েরপন্থিদের মধ্যে বিরোধ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। ২০ ডিসেম্বর থেকে ইজতেমা ময়দানে মাওলানা সাদপন্থিরা ৫ দিনের জোড় ইজতেমার আয়োজনের অনুমতি চান। অপরদিকে সরকারি অনুমতি না থাকায় শুরায়ে নেজাম (জুবায়েরপন্থিরা) সাদপন্থিদের জোড় ইজতেমার বিরোধিতা করে আসছে।
জোড় ইজতেমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে এবার সাদপন্থীদের শীর্ষ মুরুব্বি সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলামসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে রোববার (১৫ ডিসেম্বর) টঙ্গী পশ্চিম থানায় মামলা করেছে শুরায়ে নেজামের মোহাম্মদ হোসেন নামে এক সাথী। সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকেলে শুরায়ে নিজামের মিডিয়া সমন্বয়কারী হাবিবুল্লাহ রায়হান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার আসামিরা হলেন- সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম (৭০), মাওলানা আব্দুল্লাহ মনসুর (৫৫), মাওলানা মোয়াজ বিন নূর (৪০), মাওলানা জিয়া বিন কাসেম (৪৫), মুফতি আজিমুদ্দিন (৪৫), মুফতি ওসামা ইসলাম (৪২), মুফতি সৈয়দ আনোয়ার আবদুল্লাহ (৪৫), মুফতি সফিউল্লাহ (৪৫), মাওলানা আনাস (৪৫), হাজী বসির শিকদার (৫৫), মোহাম্মদ মনির হোসেন তুষার উরফে হাজী মনির (৪০), ইঞ্জিনিয়ার মুহিবুল্লাহ (৭০), রেজা আরিফ (৫২), আতাউর রহমান (৫০) ও অ্যাডভোকেট ফরিদ (৪৫)।
মামলার বিবরণে বলা হয়, টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের পার্শ্ববর্তী স্টেশন রোড মোড়ে শুরায়ে নেজামের তত্ত্বাবধানে শান্তিপূর্ণ অবস্থান ধর্মঘট পালনরত তাবলিগের সাথী ও তাওহিদি ছাত্র-জনতাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাদের চলমান নোহা গাড়ি অত্যন্ত দ্রুততার সাথে হত্যার অপচেষ্টা করে সাথীদের ওপর তুলে দেয়। এতে সাঈদ আহমদকে (২০) গাড়ির নিচে চাপা দিতে চাইলে তিনি দ্রুত সরে পড়ার সময় গাড়ির সামনের ধারালো স্টিলের আঘাতে মারাত্মক জখম হন। ওই গাড়ির প্রচণ্ড ধাক্কায় অপর একজন প্রায় ৫/৭ হাত দূরে ছিটকে পড়ে যান এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক জখমপ্রাপ্ত হন। আসামিরা বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে গুরুতর আঘাত করে অপরাধ করেছেন।
এর আগে শুরায়ে নেজাম (জুবায়েরপন্থি) ২০১৮ সালে ইজতেমায় দুই মুসল্লি নিহতের ঘটনায় সাদপন্থিদের অভিযুক্ত করে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। এ সময় সাদপন্থিরা স্টেশন রোড অতিক্রমকালে হামলার ঘটনা ঘটলে সাদপন্থিদের ৫ জন আহত হন। এ ঘটনায় সাদপন্থি মো. শিহাব উদ্দিন বাদী হয়ে গত ১২ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে জুবায়েরপন্থি ৩৪ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ৩০/৪০জনের নামে টঙ্গী পশ্চিম থানায় মামলা করেন।
এ ব্যাপারে টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি ইস্কান্দার হাবিবুর রহমান বলেন, দুই পক্ষের দুটি মামলা রেকর্ড হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা যায়, আগামী ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রথম পর্ব এবং ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। ৩ ডিসেম্বর শুরায়ে নেজামের আয়োজনে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের প্রস্তুতি হিসেবে ৫ দিনব্যাপী জোড় ইজতেমা শেষ হয়েছে। আগামী ২০ ডিসেম্বর সাদপন্থিরা জোড় ইজতেমা করবেন। জুবায়েরপন্থিরা তা করতে দেবেন না বলে বিরোধ চলে আসছে। এ অবস্থায় উভয়পক্ষ পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন, সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করছে। শুরায়ে নেজাম বলছে- সাদপন্থিদের জোড় ইজতেমা করার সরকারি কোনো অনুমোদন নেই। তারা জোরপূর্বক জোড় ইজতেমা করতে চায়। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির শঙ্কা রয়েছে।