ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে গত আগস্টের শুরুতে শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। তার দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের পর পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটছে। আর এতেই উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে ভারতে। এমনকি ভারতীয় গোয়েন্দারা আতঙ্কে প্রমাদ গুণছেন বলেও উল্লেখ করা হচ্ছে।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার।
কলকাতার এই সংবাদমাধ্যমটি বলছে, সাম্প্রতিক পালাবদলের পরে পরিস্থিতি বদলে গেছে বাংলাদেশে। পাকিস্তানের সঙ্গে সখ্য বাড়ানোর কৌশল নিয়েছে সে দেশের নতুন সরকার। পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসার নিয়ম সহজ করেছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানও বাংলাদেশি নাগরিকদের আরও বেশি সংখ্যায় ভিসা দেবে বলে জানিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে প্রমাদ গুণছেন ভারতের গোয়েন্দারা। তাদের অনেকেই বলছেন, পাকিস্তান-বিরোধী হওয়া সত্ত্বেও হাসিনা সরকারের আমলেই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে বাংলাদেশি সন্ত্রাসীরা সংগঠন বিস্তার করেছিল। জেএমবি, একিউআইএস-সহ একাধিক সংগঠনের আস্তানা পাওয়া গিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গে।
কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলছেন, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের সখ্য বৃদ্ধি স্বাভাবিক ভাবেই (ভারতের জন্য) দুশ্চিন্তার কারণ। কারণ, তাতে ভারতের পূর্ব এবং পশ্চিম, দু’দিকেই এক মনোভাবাপন্ন প্রতিবেশী থাকবে। এছাড়া এত দিন বাংলাদেশে জঙ্গি থাকলে সে দেশের গোয়েন্দা এবং সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে তার মোকাবিলা করার সুযোগ ভারতের ছিল। কিন্তু সরকারি ভাবে বাংলাদেশে পাকিস্তানের প্রভাব বৃদ্ধি হলে ভারতের পক্ষে জঙ্গি দমনে সমন্বয় সাধন কার্যত অসম্ভব হবে।
ভারতের কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞ এবং গোয়েন্দাদের একাংশের আশঙ্কা, ভিসা নিয়ে ক্রমাগত বাংলাদেশে আসতে পারে পাকিস্তানিরা এবং বাংলাদেশি তরুণদের মধ্যে আরও ভারত-বিদ্বেষী মনোভাব উস্কে দিতে পারে তারা।
ভারতীয় গোয়েন্দাদের একাংশ এটিও বলছেন, ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে বিএসএফ থাকে। নিয়ন্ত্রণ রেখায় মোতায়েন থাকে সেনাবাহিনী। স্পর্শকাতর দেশ হওয়ায় নজরদারিও অনেক বেশি। কিন্তু বাংলাদেশ সীমান্তে উত্তেজনা কম থাকায় এবং ভৌগোলিক কারণে নজরদারি তুলনামূলক কম।
যদিও গোয়েন্দাদের অনেকে বলছেন, সাম্প্রতিক পালাবদলের পরে বাংলাদেশ সীমান্তে নজরদারি অনেক বাড়ানো হয়েছে। তাই সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কারও প্রবেশ করা ততটা সহজ না-ও হতে পারে।
তবে এরই মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে জাল পাসপোর্ট ও সরকারি পরিচয়পত্র তৈরির একটি চক্র ধরা পড়েছে। আর সেটিও চিন্তা বাড়িয়েছে গোয়েন্দাদের।