গত ৫ দশকেরও বেশি সময় ধরে চলমান বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্কে শান্তি ও বন্ধুত্বকে সমুন্নত রাখার আহ্বান জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে খোলা চিঠি দিয়েছেন ভারতের ৬৮৫ জন বিশিষ্ট নাগরিক। আজ বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতের দৈনিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
ভারতের সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এস ওয়াই কুরাইশিসহ চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন ১৯ জন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, ৩৪ জন সাবেক রাষ্ট্রদূত, ৩০০ জন শিক্ষাবিদ, ১৩৯ জন সাবেক আমলা, ১৯২ জন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা এবং ৩৫ জন সিভিল সোসাইটি সদস্য।
স্বাক্ষরকারীদের প্রত্যেকেই বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং তাদের সহায়-সম্পত্তি, কর্মসংস্থান ও ব্যবসা-বাণিজ্যকে লক্ষ্য করে সব ধরনের হামলা বন্ধে অন্তর্বর্তী সরকারকে জরুরিভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতীয় ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে গত ৫৩ বছরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যে বিশ্বাস শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক চলছে, তা রক্ষা করা এবং ভারতবিদ্বেষী মনোভাবকে প্রশ্রয় না দেওয়ার আহ্বানও জানানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বেশ কিছু সাম্প্রদায়িক হামলা, সরকারি সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় মবোক্রেসির প্রভাব, সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন দপ্তর থেকে হিন্দুদের চাকরি ছাড়তে বাধ্য করা প্রভৃতি নিয়ে ভারতের জনগণ খুবই উদ্বিগ্ন। আমরা জানতে পেরেছি যে যদিও সেনাবাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারপরও অনেক পুলিশ সদস্য এখনও কাজে যোগ দেননি এবং বাংলাদেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে এখনও স্বাভাবিকতা আসেনি।”
“এই অস্থির অবস্থা যদি দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে তা একদিকে দুই দেশের সীমান্তজুড়ে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং ভারতের আইনের শাসন রক্ষার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।”
“ভারত এবং বাংলাদেশের সম্পর্কের বয়স ৫ দশকেরও বেশি। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে পারস্পিরক বন্ধুত্ব ও সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্কের ভিত্তিতে অনেক লক্ষ্য অর্জন করেছে দুই দেশ। গত ৫ দশকে সমুদ্রসীমা ও ছিটমহল সমস্যার সমাধান হয়েছে; বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, সড়ক যোগাযোগ এবং অবকাঠামোতে বিপুল বিনিয়োগ করেছে ভারত— যার সুফল ভোগ করছে বাংলাদেশ এবং ভারত উভয়েই। কঠিন সময়ে বাংলাদেশকে আর্থিক সহায়তাও দিয়েছে ভারত।”
“বাংলাদেশ এবং ভারত— উভয় রাষ্ট্রের এগিয়ে যাওয়ার জন্য বিশ্বাস, সহযোগিতা এবং বন্ধুত্বপূর্ণ একটি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জরুরি। বাংলাদেশের প্রতি আমাদের আহ্বান— দয়া করে শত্রুতা ও বিদ্বেষপূর্ণ ভারতবিরোধী মনোভাবকে প্রশ্রয় দেবেন না। কারণ এ ধরনের মনোভাবকে প্রশ্রয় দেওয়া হলে তা দুই দেশের সম্পর্কের ভিত্তিমূলকে আঘাত করবে।”