সশস্ত্র গোষ্ঠীর ভাইরাল ভিডিওটি বাংলাদেশের কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীর নয় বরং এটি মিয়ানমারের আরাকান ন্যাশনাল ডিফেন্স (এএনডিএফ) নামের একটি নতুন সশস্ত্র গোষ্ঠীর ভিডিও। রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে এ তথ্য জানা যায়।
সম্প্রতি যশোরের জামিয়া ইসলামিয়া নামের একটি মাদ্রাসায় গত ১৭ ও ১৮ ডিসেম্বর বার্ষিক অনুষ্ঠানে মাদ্রাসাটির কিছু শিক্ষার্থী ইসরায়েল-ফিলিস্তিন বিষয়বস্তুর ওপর একটি নাটক মঞ্চস্থ করে। নাটকটিতে শিক্ষার্থীদের একজন ফিলিস্তিনি নেতার চরিত্রে অভিনয় করে এবং এতে প্লাস্টিকের অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। নাটকটির একটি ভিডিও ইন্টারনেট ছড়িয়ে পড়লে তা বাংলাদেশের ‘সশস্ত্র গোষ্ঠীর’ দাবি করে অপপ্রচার চালানো হয় এবং ভিডিওটি সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।
একই সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘সুদখোর দেশটাকে জঙ্গিদের অভয়ারণ্য বানিয়ে ফেলেছে’ শিরোনামে আরেকটি ভিডিও ভাইরাল হয়। ভিডিওতে মুখ ঢাকা কিছু ব্যক্তিকে বক্তব্য দিতে দেখা যায় এবং তাদের বক্তব্যে ‘মুজাহিদীন’ ও ‘জিহাদ’ ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করতে শোনা যায়। ভিডিওটি প্রচারের মাধ্যমে মূলত দাবি করা হচ্ছে- এটি বাংলাদেশের কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীর ভিডিও।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভাইরাল ভিডিওটি বাংলাদেশের কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় বরং এটি মিয়ানমারের আরাকান ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্স (এএনডিএফ) নামের একটি নতুন সশস্ত্র গোষ্ঠীর ভিডিও।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে মিয়ানমার ভিত্তিক গণমাধ্যম ডেভেলপমেন্ট মিডিয়া গ্রুপ (ডিএমজি)-এর ওয়েবসাইটে গত ১৩ ডিসেম্বর ‘নিউ মুসলিম আর্মড গ্রুপ ইমার্জেস ইন আরাকান স্টেট’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনের সঙ্গে যুক্ত ছবির সঙ্গে প্রচারিত ভিডিওর সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আরকান আর্মি মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তের মংডু শহর দখলের পর আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াই করতে আরাকান ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্স (এএনডিএফ) নামের একটি নতুন মুসলিম সশস্ত্র গোষ্ঠী গঠিত হয়েছে।
সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে এএনডিএফের এক সদস্য তাদের উপস্থিতি প্রকাশ করে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অঙ্গীকার করেন। মিয়ানমারভিত্তিক গণমাধ্যম ইরা’স আই’র ওয়েবসাইটে গত ১৪ ডিসেম্বর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য পাওয়া যায়।
পরে ওই প্রতিবেদনগুলোর সূত্র ধরে ‘রোহিঙ্গা নলেজ ওর্য়াল্ড’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত ১১ ডিসেম্বর প্রকাশিত আলোচিত ভিডিওটির ২ মিনিট ১৯ সেকেন্ডের একটি বর্ধিত সংস্করণ পাওয়া যায়। ওই ইউটিউব চ্যানেলের বর্ণনায়ও ভিডিওটি এএনডিএফর বলে দাবি করা হয়।
মিয়ানমারের এই নতুন সশস্ত্র গোষ্ঠীর ভিডিও বাংলাদেশের সশস্ত্র গোষ্ঠীর বলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, যা ডাহা মিথ্যাচার বলে রিউমর স্ক্যানারের ফ্যাক্টচেকে উঠে এসেছে।