বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া চাই। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কতগুলো বাস্তবভিত্তিক এবং মৌলিক সংস্কার চাই। সংস্কারের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান সরকার যেন নির্বাচনের রোডম্যাপ দেয়। তবে রোডম্যাপ দেওয়ার আগে উপযুক্ত ও পরিণত বয়স যাদের হয়েছে তাদের সকলের ভোটের তালিকা নিশ্চিত দেখতে চাই।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সন্তানরা তিনটি নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি, ভোটের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি হয়েছিল। ভোটের সেই অধিকার তারা আমাদের ফিরিয়ে দিয়েছে, এজন্য আমরা তাদের স্যালুট জানাই। তাদের সকলের ভোট নিশ্চিত করতে হবে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে সকলের ভোট তুলতে হবে। এ ছাড়া আমাদের সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে যারা লড়াই করেছে, যুদ্ধ করেছে সেই প্রবাসীদেরও ভোট নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের যে প্রবাসীরা আছে, তাদের সকলের ভোটের তালিকা সম্পন্ন হওয়ার পরেই নির্বাচন দিতে হবে। তাহলে সকল যোদ্ধার মতের প্রতিফলন হবে ইনশাআল্লাহ।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেলে খুলনার কয়রার কপোতাক্ষ কলেজ ময়দানে উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা আরও বলেছি- এই নির্বাচন হতে হবে আনুপাতিক হারে। যে দল যত পারসেন্ট ভোট পাবে সেই দল সংসদে তত পারসেন্ট প্রতিনিধিত্ব করবে। এতে করে এক পারসেন্ট ভোটও যদি কোনো দল পায় তাহলে সেই দলের যোগ্য লোক থাকলে তারাও সংসদে গিয়ে প্রতিনিধিত্ব করবে। তাহলে কোনো নির্দিষ্ট দলের হাতে দেশ এবং ভোট এই দুটি জিম্মি হওয়ার আর আশঙ্কা থাকবে না। এই জন্য আমরা চাই যে আনুপাতিক হারে নির্বাচনটা হোক।
খুলনার কয়রা-পাইকগাছার প্রধান সমস্যা বেঁড়িবাধ সংকট নিরসনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে জামায়াতের আমির বলেন, আপনারা অন্তত শুরু করুন। জামায়াত দেশ সেবার সুযোগ পেলে আর কোনো দাবি করতে হবে না, বরং জনগণের সংকটগুলো খুঁজে সমাধানের চেষ্টা করবে। এ দেশের যুবকরা বৈষম্যমুক্ত যে সমাজের স্বপ্ন দেখেছিল তেমন একটি সমাজ গড়তে তিনি সকলের ঐক্যবদ্ধ সহযোগিতা কামনা করেন।
কর্মী সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, মা-বোনদেরকে জামায়াত ভীতি দেখানো হচ্ছে। কিন্তু জামায়াত দেশ সেবার সুযোগ পেলে নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গেই মা-বোনেরা দেশ গড়ার কাজে অংশ নেবে।
সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু বলতে কোনো বাক্য এ দেশে নেই উল্লেখ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, সবাইকে নিয়ে মিলেমিশেই দেশ গড়তে চায় জামায়াতে ইসলামী। বিশেষ কোনো গোষ্ঠী নয়, বরং ‘প্রত্যেকেই আমরা একেকজন যোদ্ধা’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আওয়ামী লীগ আমলের তিনটি নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে জামায়াতের আমির বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচন ছিল ভোটারবিহীন, ১৮ সালে হয় নিশিরাতের নির্বাচন আর ২৪ সালে হয় ডামি নির্বাচন। সুতরাং এমন নির্বাচন আর দেশবাসী দেখতে চায় না। ডামি নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু এ দেশের ছাত্র-জনতার মাধ্যমে আল্লাহ তাদের সেই অপশাসন থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করেছেন। আওয়ামী লীগ দেশের বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন এমনকি শিক্ষাব্যবস্থাসহ সব ধ্বংস করেছে। মেয়েদের ইজ্জতের কোনো গ্যারান্টি ছিল না। এসব বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজ ফুঁসে উঠেছিল। রংপুরের আবু সাইদের মতো অসংখ্য ছাত্র-জনতার বুকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ এ দেশের মালিক ছিল না। তারা দেশের মালিক থাকলে দেশ ছেড়ে পালাতো না। বাড়িওয়ালা বাড়ি ছেড়ে পালায় না বরং ভাড়াটিয়া খেলাপি হলে পালিয়ে যায়। আওয়ামী লীগের বেলায়ও তাই হয়েছে। শেখ হাসিনা দেশ থেকে চলে গেলেও দেশকে শান্তিতে রাখতে দিচ্ছে না। চারদিকে ষড়যন্ত্রের আগুন জ্বলছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের ওপর অবিচার করা হয়েছে। কিন্তু আমরা বলি আওয়ামী লীগের ওপর সুবিচার করা হোক। কেননা তাদের ওপর সুবিচার করা হলেও তাদের শাস্তি হবে। তাদের বিচার করতে হতে এজন্য যে, আর যেন কেউ এমন দুর্বৃত্ত না হতে পারে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমাদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে আমাদের সন্তানরা। তাদের সেই মর্যাদা আমাদের রক্ষা করতে হবে।
কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চলের পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও খুলনা জেলার আমির মাওলানা এমরান হুসাইন, সাতক্ষীরা জেলার আমির মাওলানা শহিদুল ইসলাম মুকুল।
উপজেলা আমির মাওলানা মোক্তার হোসাইনের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মাওলানা শেখ সিরাজুল ইসলামের পরিচালনায় আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন খুলনার সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, খুলনা মহানগরীর সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হোসাইন হেলাল, জেলার সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, অধ্যক্ষ গাওসুল আযম হাদী, খুলনা উত্তর জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি বেলাল হোসাইন রিয়াদ ও সেক্রেটারি আবু ইউসুফ ফকির।