উন্নত চিকিৎসার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে তার দলের দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। এরই মধ্যে বহুবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে। তবুও বিদেশে যাওয়ার অনুমতি না দিয়ে একরকম চিকিৎসাবঞ্চিত করে রাখে পতিত আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর মুক্তি পান খালেদা জিয়া। তারপর থেকেই তার লন্ডনে যাওয়ার বিষয়ে তোড়জোড় শুরু হয়।
এরই মধ্যে কয়েকবার বিদেশ যাত্রার দিনক্ষণ ঠিক হলেও তা বাতিল হয়েছে। অবশেষে আগামী সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়া লন্ডনে যাচ্ছেন বলে ৩ জানুয়ারি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক যুগান্তর। তারা বলছে, সব কিছু ঠিক থাকলে সোমবার লন্ডনে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া।
প্রতিবেদনে বিএনপির দলীয় সূত্রের বারাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাতজন চিকিৎসকসহ ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল যাবে। যার মধ্যে রয়েছেন খালেদা জিয়ার প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান। যদিও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন একই সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ম্যাডাম বিদেশ যাবেন এটা ঠিক আছে। তবে সোমবার যাওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি।
অন্যদিকে আরেক সংবাদ মাধ্যম দৈনিক সমকালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার নয়, খালেদা জিয়া বিদেশে যাবেন আগামী মঙ্গলবার। রাত ১০টায় একটি বিশেষায়িত বিমানে তাকে নিয়ে যাওয়ার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন চিকিৎসকরা। বিএনপির একটি দায়িত্বশীল সূত্রের বরাত দিয়ে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে তারা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সাবেক প্রধানমন্ত্রী লন্ডন যাবেন। দীর্ঘ এ যাত্রায় সাথে থাকবেন চিকিৎসক, পরিবারের সদস্য ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, খালেদা জিয়া প্রথমে যাবেন ছেলে তারেক রহমানের কাছে। সেখানে কয়েক দিন থাকার পর যাবেন যুক্তরাষ্ট্রে। মেরিল্যান্ডের পূর্ব বাল্টিমোরে অবস্থিত জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসপাতালে বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসার সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
এর আগে গেল ৩০ ডিসেম্বর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যাওয়ার তারিখ সুস্পষ্টভাবে বলতে পারব না। কারণ, ওনার শরীর মাঝে মধ্যে একটু খারাপ হয়ে যাচ্ছে। যে কারণে বিলম্বিত হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, চোখ ও পায়ের ফলোআপ চিকিৎসার জন্য ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই সন্ধ্যায় এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছিলেন খালেদা জিয়া। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে তিনি যাত্রাবিরতি করেন। এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ই-কে ৫৮৭ ফ্লাইটে স্থানীয় সময় রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে দুবাই বিমানবন্দরের টার্মিনাল-৩ এ অবতরণ করেন। এ সময় তার যাত্রাবিরতির খবরে সংযুক্ত আরব আমিরাত বিএনপির নেতারা বিমানবন্দরে উপস্থিত হন।
১৬ জুলাই বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে বেগম জিয়া লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। এ সময় বিএনপির তৎকালীন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং যুক্তরাজ্য বিএনপির বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী বিমানবন্দরে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান। লন্ডনে মা-ছেলের এ সাক্ষাৎকালে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান উভয়ই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তারেক রহমান নিজের গাড়িতে করে মা খালেদা জিয়াকে গন্তব্যে নিয়ে যান। সে সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের সফরসঙ্গী হিসেবে তার একান্ত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার ও গৃহপরিচারিকা ফাতেমা বেগম ছিলেন।
লন্ডন থেকে ২০১৭ সালের ১৮ অক্টোবর দেশে ফিরে ২৯ অক্টোবর কক্সবাজারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে দেখতে যান খালেদা জিয়া।