জুলাই ঘোষণাপত্রের গুরুত্বসহ ৭ দফা সংবলিত একটি লিফলেট মানুষের হাতে হাতে পৌঁছে দেওয়া শুরু করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। এই ৭ দফাকে জুলাই ঘোষণাপত্রে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছে তারা।
সোমবার (৬ জানুয়ারি) বাংলামোটর কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়। ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত তারা দেশব্যাপী লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখবেন বলে জানা যায়। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে জুলাই ঘোষণাপত্রের দাবিতে সমাবেশ করবে এ দুই সংগঠন।
লিফলেটে উল্লেখ করা বিষয়গুলো হলো-
১. জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এবং আহতদের বিনামূল্যে রাষ্ট্রীয়ভাবে সুচিকিৎসা প্রদানের প্রতিশ্রুতি স্পষ্ট করতে হবে।
২. অভ্যুত্থানে আওয়ামী খুনি ও দোসরদের বিচার নিশ্চিত করার স্পষ্ট অঙ্গীকার ব্যক্ত করতে হবে।
৩. ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থার মূল ভিত্তি সংবিধান বাতিল করে নির্বাচিত গণপরিষদ গঠনের মাধ্যমে সম্পূর্ণ নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রণয়নের অঙ্গীকার ব্যক্ত করতে হবে।
৪. ঘোষণাপত্রে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর নেতৃত্ব পরিস্কারভাবে উল্লেখ থাকতে হবে।
৫. ১৯৪৭ সালের দেশভাগ, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে যোগসূত্র রেখে ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতা পরিষ্কার করতে হবে।
৬. নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তে সব ধরনের বৈষম্য নিরসনের মধ্য দিয়ে নাগরিক পরিচয় প্রধান করে রাষ্ট্রকাঠামো গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি থাকতে হবে।
৭. জুলাই অভ্যুত্থানের একমাত্র প্রধান লক্ষ্য আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারকে উৎখাত করা ছিল না, বরং গত ৫৩ বছরের বৈষম্য, শোষণ ও ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক ব্যবস্থা বিলোপ করার লক্ষ্যে এ অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে। সুতরাং বিদ্যমান ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রকাঠামো বিলোপ করতে সব ধরনের সংস্কারের ওয়াদা দিতে হবে।
লিফলেটে উল্লেখ রয়েছে, শহীদ মিনারে ঘোষিত এক দফার ভিত্তিতে গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার উৎখাত হয়, যা সাম্প্রতিক বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। এশিয়াসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে মুক্তিকামী জনগণের জন্য বাংলাদেশের এ অভ্যুত্থান এক নতুন দিশা ও প্রেরণা! দুনিয়ার যেখানেই মুক্তিকামী জনগোষ্ঠী স্বৈরাচার উৎখাত করেছে কিংবা গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সরকার গঠন করেছে সেখানেই অভ্যুত্থানের শক্তি এ ধরনের ঐতিহাসিক অর্জনকে স্বীকৃতি দিতে জনগণের সামনে ঘোষণাপত্র তুলে ধরেছে।
এতে আরও বলা হয়, ফরাসি বিপ্লব, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, আলজেরিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের বিপ্লবী জনগোষ্ঠীর ইতিহাসে আমরা এ ধরনের নজির দেখেছি। নিপীড়িত ও মজলুম জনগোষ্ঠীর লড়াই হিসেবে আমরাও জনগণের সামনে এ ধরনের একটি ঐতিহাসিক ঘোষণা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করছি। যেন ছাত্র-জনতার জুলাই অভ্যুত্থান আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে দালিলিক প্রমাণ হিসেবে সুরক্ষিত থাকে।
ঘোষণাপত্র অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতার উৎস এবং পরবর্তী সংবিধানের ভিত্তিমূল উল্লেখ করে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সংঘটিত অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানকে টিকিয়ে রাখতে এবং বৈশ্বিক স্বীকৃতি আদায়ের লক্ষ্যে শুরু থেকেই আমরা একটি প্রোক্লেমেশন তথা ঘোষণাপত্র জারির দাবি জানিয়ে এসেছি। এ ঘোষণাপত্রই হবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতার উৎস এবং পরবর্তী সংবিধানের ভিত্তিমূল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইমার্জেন্সি ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেলের সম্পাদক হামযা মাহবুব বলেন, গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য এ দাবিগুলোর পক্ষে জনমত তৈরি করার জন্য আমাদের কার্যক্রম। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণ ফ্যাসিবাদবিরোধী আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন দেখতে পাবে।
প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ঘোষণার সময় বেঁধে দিয়েছে। এসময় জুলাই অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী অংশীজনদের সঙ্গে কথা বলে একটি ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার দাবি জানিয়েছেন তারা।