হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপত্তাকর্মীদের মারধরে রক্তাক্ত হওয়া নরওয়ে থেকে আসা সেই প্রবাসীকে উল্টো ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে বিমানবন্দরের ম্যাজিস্ট্রেট।
বুধবার (৮ জানুয়ারি) রাতে বিমানবন্দরে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট হাজির করে তাকে অর্থদণ্ডের শাস্তি দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের ম্যাজিস্ট্রেট মো. ফারুক সুফিয়ান মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে প্রবাসী সাঈদ উদ্দিন অর্থদণ্ড করেন। প্রবাসী সাঈদ উদ্দিনের বিরুদ্ধে ১৯৮০ দণ্ডবিধির ১৮৯ ধারায় ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এই ধারায় সরকারি কর্মচারীকে হুমকি কিংবা তার কর্তব্য পালনে বাধা সৃষ্টির অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত সর্বোচ্চ দুই বছরের জেল বা জরিমানা কিংবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।
এর আগে, বুধবার রাত সোয়া ৯টার দিকে নরওয়ে প্রবাসী সাঈদ উদ্দিন বিমানবন্দরের ২ নম্বর ক্যানোপি গেট দিয়ে বেরিয়ে আসেন। গেট সংলগ্ন ডান পাশে দাঁড়ানো অবস্থায় এক এভসেক সদস্যের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে এই যাত্রী উত্তেজিত হয়ে ওই নিরাপত্তাকর্মীকে ধাক্কা দেন। এর পরপরই অন্যান্য এভসেক ও আনসার সদস্যরা সাঈদকে কনকর্স হলের দিকে নিয়ে যায়। এ সময় সাত-আট জন মিলে তাকে বেদম মারপিট করে। এতে করে সাঈদের মাথা-মুখ ফেটে রক্তাক্ত হয়ে যায়। পরে সেখান থেকে সাঈদ বেরিয়ে আসলে এমন পরিস্থিতি দেখা যায়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে এভসেক সদস্যরা তাকেসহ তার আত্মীয়স্বজন সবাইকে আবারও ভেতরে নিয়ে যায়। পরে গভীর রাতে তাকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এদিকে বিষয়টি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ চেপে যাওয়ার চেষ্টা করলেও মারপিটের শিকার যাত্রীর রক্তমাখা শরীর ও কিছু কথা কাটাকাটির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিও দেখার পর এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ। ভিডিওতে মারপিটের শিকার ব্যক্তিকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘আপনারা পাঁচ-ছয় জন ধরে আমাকে মারছেন।’ আর পাশে থাকা এভসেক সদস্য বলছেন, ‘আমাকে ধাক্কা দিলেন। আমি কি সাধারণ মানুষ? আমার ইউনিফর্ম আছে।’ তবে ধাক্কা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আহত ব্যক্তি বলছেন, ‘আমার কথা শোনেন ভাইয়া, আমি (ধাক্কা) দেইনি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম লিখিত আকারে তার বক্তব্য পাঠান। তিনি তার লিখিত বক্তব্যে আহত যাত্রীর নাম উল্লেখ না করেই বলেন, ‘রাত সোয়া ৯টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক আগমনি ক্যানোপি-২ এর সামনে দুজন যাত্রী বিমানবন্দরের একজন নিরাপত্তা সদস্যর শারীরিকভাবে আঘাতের ঘটনা ঘটে।’
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা এবং প্রাথমিক তদন্তের বরাত দিয়ে ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘পাঁচ জন আগমনি যাত্রীর একটি দল বিমানবন্দরের কার্যক্রম শেষ করে ক্যনোপি-২ এলাকা দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার সময় তাদের মধ্যে একজন ট্রলিসহ গেটের ঠিক সম্মুখভাগে অবস্থান করলে সব আগমনি যাত্রীর জন্য প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। ওই সময় আগমনি যাত্রীদের চাপ বেশি থাকায় কর্তব্যরত এক নিরাপত্তাকর্মী বিনীতভাবে সেই যাত্রীকে কিছুটা সরে দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি তাতে কর্ণপাত না করে দাঁড়িয়ে থাকেন। পরবর্তী সময়ে কিছুক্ষণ পরে নিরাপত্তা কর্মী পুনরায় ওই যাত্রীকে সরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করতে গেলে তিনি প্রচণ্ড রাগান্বিত হয়ে পড়েন এবং অকথ্য ও অশ্রাব্য ভাষায় উক্ত নিরাপত্তা কর্মীকে গালিগালাজ করতে থাকেন। এ সময় সেখানে নিয়োজিত আরও একজন নিরাপত্তাকর্মী ওই যাত্রীকে শান্ত করার চেষ্টা করলে একপর্যায়ে ওই যাত্রীর ছেলে (একই ফ্লাইটের যাত্রী, যিনি পেছনে অবস্থান করছিলেন) ঘটনাস্থলে এসে বিমান বাহিনীর ওই নিরাপত্তা কর্মীকে শারীরিকভাবে আঘাত ও লাঞ্ছিত করেন। যাত্রীরা ওই নিরাপত্তাকর্মীকে কিলঘুষি মারা শুরু করলে তাদের মধ্যে ধ্বস্তাধস্তি হয় এবং ওই নিরাপত্তা কর্মী মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। একপর্যায়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেখানে নিয়োজিত আনসার এবং এভিয়েশন সিকিউরিটির সদস্যরা এগিয়ে আসলে ওই নিরাপত্তা কর্মীদের উল্লেখিত দুজন যাত্রীর হাত থেকে মুক্ত করা হয়।’