ঐতিহ্যবাহী রংপুর প্রেসক্লাবে অবৈধভাবে প্রশাসক নিয়োগ ও সাংবাদিকদের নামে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে একাট্টা হয়েছে রংপুরবাসী। সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রীর আমলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তাদের দুর্নীতি ঢাকতে মামলা দিয়ে সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করছে। সমাজসেবা কর্মকর্তাদের এমন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে রংপুরের বিভিন্ন সাংবাদিক, সামাজিক, সাংষ্কৃতিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠন।
অবিলম্বে বেআইনিভাবে নিয়োগ করা প্রশাসককে প্রত্যাহারসহ ১৯ সাংবাদিকদের নামে করা মিথ্যা মামলা তুলে না নিলে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও সমাজসেবা কার্যালয় ঘেরাও এবং অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রংপুরের সাংবাদিক সমাজ ও সাধারণ জনতার ব্যানারে রংপুর প্রেসক্লাব চত্বরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রেসক্লাবের সিনিয়র সদস্য সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আরিফুল হক রুজু।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া সমাজসেবা কর্মকর্তারা সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সরকারের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিক বনে গেছেন। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীতে অপকর্ম ঢাকতে তারা সাংবাদিকদের পেছনে উঠে পড়ে লেগেছেন। নিবন্ধন নবায়নকে কেন্দ্র করে ষাট বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী রংপুর প্রেসক্লাবে অবৈধভাবে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে সমাজসেবা অধিদপ্তর। রংপুরে কর্মরত ১৯ পেশাদার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করে তাদের কন্ঠরোধ করার চেষ্টা করছে। সেই সঙ্গে প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে প্রেসক্লাবে সংরক্ষিত জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার ওপর বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের তাণ্ডবের নানা ধরনের ডকুমেন্ট নষ্ট করার চেষ্টা করছে।
তারা আরও বলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তরের এমন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ঘটনায় রংপুরের সচেতন মহল নিন্দা জানিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করানো সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে প্রশাসনিক ও আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রেসক্লাব থেকে প্রশাসক প্রত্যাহার করে নির্বাচিত কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরসহ অবিলম্বে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করা না হলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার হুমকি দেওয়া হয়।
মানববন্ধন ও সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপি নেতা ফজলুর রহমান বাদল, জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রতিনিধি মো. নুরুজ্জামান, জেলা মটর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওয়াসিম বারী রাজ, জেলা দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক লিটন পারভেজ, জাসদ নেতা মিরাজুন নবী মিলন, বাসদ নেতা মমিনুল ইসলাম, ইউনিটি ফর ইউনিভার্স হিউমান রাইট্স অব বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের বিভাগীয় মহাসচিব মোজাক্কের হোসেন মঞ্জু, সাংগঠনিক সম্পাদক জাবেদ হোসেন সুইডেন, সিটি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির দপ্তর সম্পাদক এবং জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি বিপ্লব আহমেদ বিটু, রংপুর আর্ট একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল ইসলাম রেপিট, একাত্তর গণতান্ত্রিক পরিষদের সভাপতি শহিদুল ইসলাম সাজু, প্রজন্ম একাত্তরের কেন্দ্রীয় সংগঠক দেবদাস ঘোষ দেবু, প্রেসক্লাব দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, পাকারমাথা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি বারী মিঠু, সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন সুমন, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মেরিনা লাভলী, সিনিয়র সাংবাদিক জয়নাল আবেদীন, দৈনিক বায়ান্নার আলোর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক তাজিদুল ইসলাম লাল, বার্তা সম্পাদক আশরাফুল আলম আপন, পীরগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি শাহ্ মো. সাদা মিয়া, প্রেসক্লাবের সদস্য সময় টিভির স্টাফ রিপোর্টার রেদওয়ান হিমেল, দৈনিক বিজনেস বাংলাদেশের ব্যুরো প্রধান আঞ্জু মনোয়ারা বেগম রেখা প্রমুখ।
সমাবেশ সঞ্চালনা করেন প্রেসক্লাবের সদস্য দীপ্ত টিভির প্রতিনিধি বাবলুর রহমান বারী ও বৈশাখী টিভির রংপুর প্রতিনিধি ইসমাইল হুসাইন প্রিন্স।
এদিকে প্রেসক্লাবে অবৈধভাবে প্রশাসক নিয়োগ ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার সোহরাওয়াদী শুভ, নাসির হোসেন এবং আরিফুল ইসলাম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা অবিলম্বে নির্বাচিত কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করে মামলা তুলে দেওয়ার জোর দাবি জানান।