রমজান মাস শেষ প্রান্তে। স্বাভাবিকভাবেই এখন আলোচনা হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর এবং ঈদের চাঁদ নিয়ে।
জ্যোতির্বিদরা বলছেন, এ বছর ২৯ মার্চ (২৯ রমজান) মধ্যপ্রাচ্যসহ মুসলিম বিশ্বে ঈদের চাঁদ দেখতে পাওয়া ‘অসম্ভব’। কাল শনিবার সৌদিতে ঈদের চাঁদের অনুসন্ধান করা হবে।
তবে অনেকে বলছেন, কাল চাঁদ দেখা যাক আর না যাক সৌদি যে কোনোভাবে ঈদের ঘোষণা দিতে পারে।
সংবাদমাধ্যম মিডেল ইস্ট আই গত ২৬ মার্চ এক প্রতিবেদনে জানায়, গত কয়েক বছর ধরে ইসলামের সবচেয়ে পবিত্র স্থান সৌদির সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে তারা চাঁদ দেখার ব্যাপারে ‘মিথ্যা’ তথ্য দিচ্ছে। যেখানে বিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিদরা বলছেন, চাঁদ দেখা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এ নিয়ে রয়েছে বিস্তর বিতর্ক।
বিতর্ক আসলে কী নিয়ে?
মুসলিমরা চন্দ্রবর্ষ অনুসরণ করেন। চন্দ্রবর্ষে ১২টি মাস থাকে। এবং একেকটি মাস ২৯ অথবা ৩০ দিনের হয়ে থাকে। রমজান শেষ হওয়ার বিষয়টিও নির্ভর করে চাঁদ দেখার ওপর।
বিশ্বের কিছু দেশ নিজেরা চাঁদ দেখে রমজান ও ঈদ শুরুর বিষয়টি নির্ধারণ করে। অপরদিকে কিছু দেশ সৌদির ওপর নির্ভর করে থাকে।
যেমন যুক্তরাজ্যে— যেখানে কোনো চাঁদ দেখা কমিটি নেই। দেশটির মুসল্লিরা সৌদির ঘোষণা অনুকরণ করে। যদিও স্কলাররা এ ব্যাপারে মানা করে থাকেন।
সৌদি বছরের হিসাব-নিকাশ করে একটি উম আল-কুরা নামের একটি বর্ষপঞ্জিকার ওপর। এটির হিসাব অনুযায়ী, এ বছর ঈদুল ফিতর হবে রোববার (৩০ মার্চ)।
তবে জ্যোতির্বিদরা জানিয়েছেন, এবার সৌদিতে রমজানের ২৯ মার্চ শাওয়াল/ ঈদের চাঁদ দেখা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এমনকি টেলিস্কোপের মতো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেও চাঁদ দেখা যাবে না।
অনেক মুসলিম দেশ সৌদির ঘোষণার ওপর নির্ভর করে ঈদ পালন করবে। অন্য দেশগুলো নিজেদের মতো করে সোমবার অথবা মঙ্গলবার ঈদ পালন করবে।
সৌদির ঈদের ঘোষণা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে গত কয়েক বছর ধরেই বিতর্ক রয়েছে। যারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ২০২৩ সালের ঈদুল ফিতর। ওই বছর জ্যোতির্বিদরা সৌদির ঈদ ঘোষণার তারিখ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তারা বলেছিলেন ঈদ এদিন হবে না। কিন্তু সৌদি ঠিক ঈদের ঘোষণা দিয়েছিল।
ওই বছরের ২০ এপ্রিল সৌদি আরব ঈদের চাঁদের অনুসন্ধান করছিল। তখন কুয়েতের প্রখ্যাত জ্যোতির্বিদ আব্দেল আল-সাদুন বলেছিলেন, আরব উপদ্বীপে কোনোভাবেই চাঁদ দেখা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, “যদি কেউ চাঁদ দেখে থাকেন তাহলে প্রমাণ হিসেবে এটির ছবি তুলুন।” কিন্তু ওইদিনই সৌদি জানায় ২১ এপ্রিল ঈদ পালিত হবে।
এরপর অনেক পর্যবেক্ষক সৌদির কাছে চাঁদ দেখতে পাওয়ার প্রমাণ চেয়েছিলেন। যদিও তারা কোনো ছবি দেয়নি। তবে সৌদির জ্যোতির্বিদ মুলহাম আল-হিন্দি ‘অনুজ্বল একটি চাঁদের’ ছবি প্রকাশ করে দাবি করেছিলেন এটি একটি সিসিডি ক্যামেরা দিয়ে তোলা হয়েছে।
অপরদিকে গত বছর, ২০২৪ সালের ৬ জুন সৌদি আরব চাঁদ দেখার দাবি করে ঈদুল আজহার তারিখ ঘোষণা করে। যদিও জ্যোতির্বিদরা ওইদিন জানিয়েছিলেন, বৈজ্ঞানিক হিসাব-নিকাশে এদিন চাঁদ দেখা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
২৯ মার্চ চাঁদ দেখা যাবে না— দাবি আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিদ্যা কেন্দ্রের
আরব আমিরাতভিত্তিক আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিদ্যা কেন্দ্র জানিয়েছে, শনিবার বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেও চাঁদ দেখা সম্ভব নয়। তবে ওইদিন যেহেতু চাঁদ তার সূর্যের সংযোগে পৌঁছাবে তাই কিছু দেশ রোববার ঈদুল ফিতরের ঘোষণা দিতে পারে বলেও জানায় সংস্থাটি।
যেহেতু সৌদির নিজস্ব বর্ষপঞ্জিকা উম আল-কুরার তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সৌদি আরবে ঈদের দিন হিসেবে ৩০ মার্চের কথা উল্লেখ আছে। তাই তারা হয়ত এ অনুযায়ী, চাঁদ ওঠার ঘোষণা দিতে পারে বলে বলে ধারণা অনেকের।
নিউ ক্রিসেন্ট সোসাইটি নামের একটি ইসলামিক বর্ষপঞ্জিকা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ইমাদ আহমেদ সংবাদমাধ্যম মিডেল ইস্ট আইকে বলেছেন, “আমরা লক্ষ্য করেছি, বৈজ্ঞানিকভাবে যেখানে চাঁদ দেখা সম্ভব নয়, সৌদি সেখানে চাঁদ দেখার তথ্য দিতে ইচ্ছুক। এটি তারা প্রায়ই করে। আমরা এগুলো প্রত্যাশা করতে পারি কারণ এগুলো বেশিরভাগই উম আল-কুরা বর্ষপঞ্জিকার সঙ্গে মেলে। যেটির সঙ্গে চাঁদ দেখার বিষয়টি মেলে না।” তিনি আরও বলেন, “প্রতি বছর নির্দিষ্ট এলাকার দুই থেকে তিনজন ব্যক্তি চাঁদ দেখার দাবি করেন। অন্য কেউ আর এ দাবি করেন না।”
এদিকে সৌদিই একমাত্র দেশ নয়, যেটি ঈদের দিন নির্ধারণের ক্ষেত্রে হিসাব-নিকাশের বিষয়টি ব্যবহার করে। তুরস্কও এই কাজ করে। তবে তুরস্ক এটি ঘোষণা দিয়ে করে। এ ব্যাপারে তারা স্বচ্ছ। তারা দাবি করে না, তারা চাঁদ দেখেছে, যেমনটা সৌদি করে।— বলেন ইমাদ আহমেদ।