বানরের রুটি ভাগের খেলায় মেতেছেন আরবের শেখরা। মধ্যপ্রাচ্যের বুকে ছোট্ট এক খণ্ড নিয়ে গঠিত ফিলিস্তিন রাষ্ট্র। কিন্তু সেই রাষ্ট্রের ভেতর নিজের শেকড় গেড়েছে ইসরায়েল। ধীরে ধীরে গিলে খাচ্ছে, পুরো ফিলিস্তিনকে। তবে ইসরায়েলের স্বপ্ন শুধু ফিলিস্তিনে সীমাবদ্ধ নয়। পুরো মধ্যপ্রাচ্যেই ছড়ি ঘোরাতে চায় ইহুদিবাদী রাষ্ট্রটি। এজন্য নিজের গ্রেটার ইসরায়েল প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করছে তেল আবিব। আর ইসরায়েলি এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে পশ্চিমারা যেমন মদদ দিচ্ছে তেমনই সঙ্গ দিচ্ছেন আরবের শেখরা।
ফিলিস্তিনে একটি বোমাও ফেলেনি আরব কোনো দেশ। ফিলিস্তিনকে বাঁচাতেও এগিয়ে আসেনি কেউ। মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী কয়েকটি প্রতিবেশী থাকার পরও ফিলিস্তিনের এমন অবস্থা হবে তা কেউ ভাবতেও পারছে না। কিন্তু সামরিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী এই আরব দেশগুলো ফিলিস্তিন নিয়ে পুরোপুরি নির্বিকার। মুসলিম ভাইয়ের রক্ত দেখে প্রতিবেশী আরব শেখদের মন কাঁদছে কেন না, সেই প্রশ্নই এখন ঘুরে ফিরছে।
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে মিসরের। মুসলিম বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী এই দেশ তারপরও ইসরায়েলের অভিযান নিয়ে নিশ্চুপ। সামরিক সরকারের অধীনে থাকা মিসরের জনগণের ফিলিস্তিনিদের প্রতি সফট কর্নার রয়েছে। তবে মসনদের মালিক আবার যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের মিত্র। এর বাইরেও গাজায় নিজের স্বার্থও রয়েছে মিসরের শাসক গোষ্ঠীর। অথচ মিসর সামরিক বা কূটনৈতিক- যেকোনো একটি পদক্ষেপ জোরালোভাবে নিলেই বন্ধ হয়ে যাবে গাজায় ইসরায়েলি হামলা।
ইসলাম ধর্মের প্রাণকেন্দ্র সৌদি আরবে শাসনক্ষমতায় রয়েছে বয়োবৃদ্ধ বাদশাহ সালমান। কিন্তু দেশ আসলে চালান তার ছেলে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। প্রশাসনে অনুগতদের নিয়োগ এবং প্রতিবাদী যেকোনো কণ্ঠস্বর ঠাণ্ডা করার ক্ষেত্রে জুড়ি নেই তার। তর তর করে ক্ষমতার সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় তার নমুনাও দেখিয়েছেন যুবরাজ মোহাম্মদ। যুক্তরাষ্ট্রের আনুকূল্য চাওয়া সৌদির স্বপ্ন বিশ্বের ব্যবসা-বিনোদন রাজধানী হবে।
মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরবের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র সংযুক্ত আরব আমিরাত। বলা যেতে পারে, সৌদির কথার বাইরে কোনো কাজই করে না দেশটি। সেই আমিরাতেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাধুনিক ঘাঁটি। দেশটি থেকে কোটি কোটি ডলার খরচ করে অস্ত্রশস্ত্রও কেনে আমিরাত। আবার সেই দেশটিই প্রায় অর্ধ দশক আগে ইসরায়েলের সঙ্গে গাঁটছড়া বাধে। সৌদির বন্ধু হলেও আমিরাতেরও মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে উচ্চাভিলাষী স্বপ্ন রয়েছে।
বিগত কয়েক দশকে মধ্যস্থতাকারীর তকমা ভালোই গায়ে লাগিয়েছে কাতার। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশ আসলেই জটিল সমীকরণে চলে। এই দেশেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ একটি সামরিক ঘাঁটি। আবার ইসরায়েলের সঙ্গেও দেশটির ভালো সম্পর্ক রয়েছে। ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের প্রতি সহমর্মী হলেও কাতার সব সময়ই দ্বৈত ভূমিকা পালন করে এসেছে। তাই গাজা নিয়ে উপসাগরীয় এই দেশগুলোর নিজস্ব পরিকল্পনা রয়েছে। এজন্য নিজের স্বার্থেই এই দেশগুলো ঝিইয়ে রেখেছে গাজার সংঘাত। কেননা যে দেশ গাজা সংকটের সমাধান করতে পারবে, তারাই মুসলিম বিশ্বের নেতা হবে।