শুল্কনীতি দিয়ে ট্রাম্প চেয়েছিলেন কী, পেলেন কী

এপ্রিল 11, 2025
by

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহে একটি বড় ধরনের শুল্ক পরিকল্পনার ঘোষণা দেন, যা বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থাকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। তবে সেই পরিকল্পনার বড় একটি অংশ আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। তিনি ৯০ দিনের জন্য বেশিরভাগ দেশের ওপর বাড়তি শুল্ক স্থগিত করেছেন। কিন্তু চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন।

এ পরিবর্তনের মাধ্যমে ট্রাম্প তার বাণিজ্যনীতির উদ্দেশ্যগুলোর কতটা বাস্তবায়ন করতে পেরেছেন, তা নিয়েই এই প্রতিবেদন।

১. যথাযথ বাণিজ্যচুক্তি করা

ট্রাম্প বারবার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ শোষণ করেছে। তার প্রস্তাবনায় সব দেশের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক এবং কিছু দেশের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের কথা বলা হয়েছিল। এতে বিশ্বের বহু দেশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। ট্রাম্প দাবি করেন, বিশ্বের অন্তত ৭৫টি দেশের নেতারা তার সঙ্গে চুক্তি করতে যোগাযোগ করেছেন। মার্কিন সরকার জানিয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানসহ কয়েকটি দেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আগামী ৯০ দিনের মধ্যে এসব দেশকে কোনো না কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে হবে। ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতির কারণে অন্তত আলোচনার মাধ্যমে চুক্তির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

২. অভ্যন্তরীণ শিল্প খাতকে চাঙ্গা করা

ট্রাম্পের আশা ছিল, শুল্ক বসিয়ে দেশের শিল্প খাতকে আবার সক্রিয় করবেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, হুটহাট সিদ্ধান্ত পাল্টানোর ফলে ব্যবসায়ীরা দ্বিধায় পড়ছেন। আজ যদি গাড়ি শিল্প রক্ষা পায়, কাল হয়তো ইলেকট্রনিক্স শিল্প টার্গেট হবে। শুল্ক নীতিতে ধারাবাহিকতা না থাকায় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো বড় কোনো বিনিয়োগে যেতে সাহস পাচ্ছে না।

৩. চীনের সঙ্গে শক্ত অবস্থান নেওয়া

ট্রাম্প বলেছেন, চীন বহুদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রকে বাণিজ্যে ঠকিয়ে এসেছে। তিনি চীনকে শুল্কযুদ্ধের মূল লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছেন। হোয়াইট হাউজের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ট্রাম্প এখন মূলত চীনের বিরুদ্ধে শুল্ক নীতিকে ব্যবহার করছেন। ট্রাম্প আবার এটাও বলেছেন যে, বর্তমান সমস্যার জন্য তিনি চীনকে নয়, বরং মার্কিন পুরোনো নেতৃত্বকে দায়ী করেন। হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যদি চীন এগিয়ে এসে চুক্তির ইচ্ছা দেখায়, তবে ট্রাম্প ‘অত্যন্ত উদারতা’ দেখাবেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনের সঙ্গে শক্ত অবস্থান নেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় মিত্ররা দূরে সরে যেতে পারে।

৪. রাজস্ব আয় বাড়ানো

ট্রাম্প মনে করেন, শুল্ক থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আসবে, যা দিয়ে কর কমানো ও জাতীয় ঋণ পরিশোধ সম্ভব হবে। এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ১০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হলে ১০ বছরে প্রায় ২ ট্রিলিয়ন ডলার রাজস্ব আসতে পারে। এদিকে মার্কিন কংগ্রেস যে করছাড় দিয়েছে, তা একই সময়ে ৫ ট্রিলিয়ন ডলার ঘাটতি তৈরি করতে পারে বলে জানানো হয়েছে।

৫. ভোক্তামূল্য কমানো

ট্রাম্প বলেছেন, দেশের ভেতরে উৎপাদন বাড়লে প্রতিযোগিতা তৈরি হবে এবং এতে পণ্যের দাম কমবে। কিন্তু অর্থনীতিবিদদের মতে, শুল্ক আরোপে সাধারণত পণ্যের দাম বেড়ে যায়, কারণ আমদানিকৃত পণ্যের দাম বাড়ে এবং ঘরোয়া পণ্যের প্রতিযোগিতা কমে যায়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কারণে মার্কিন পরিবারগুলোর বছরে গড়ে অতিরিক্ত ১,২৫৩ ডলার ব্যয় হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, নিম্নআয়ের পরিবারগুলো এই শুল্কের বোঝা সবচেয়ে বেশি অনুভব করবে, যা ট্রাম্পের জন্য রাজনৈতিকভাবে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.

Don't Miss

নোবেল শান্তি পুরস্কার পেল নিহন হিদানকিও

চলতি বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেল জাপানি সংস্থা নিহন হিদানকিও। রয়্যাল

পদার্থবিজ্ঞানে নোবেলজয়ীর নাম ঘোষণা আজ

আজ মঙ্গলবার সুইডেনের স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ৪৫ মিনিট অনুযায়ী বাংলাদেশ
chief adviser dr. unus

ঢাকার যানজট সমস্যা সমাধানে নতুন উদ্যোগ

ঢাকার যানজট সমস্যা দূর করার জন্য নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
mashrafe

যুক্তরাষ্ট্র টি-১০ লিগ দিয়ে ক্রিকেটে ফিরছেন মাশরাফি

যুক্তরাষ্ট্র মাস্টার্স টি-১০ লিগের মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফিরতে যাচ্ছেন বাংলাদেশের
dr. yunus

ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক হবে সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বৈষম্য বিরোধী

সবার জন্য গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করতে প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাক্ষরতার অভীষ্ট লক্ষ্য

ঐতিহাসিক জয়, যা ভাষায় প্রকাশ করার মত না : শান্ত

পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জয়কে দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে যুগান্তকারী
chief adviser dr. unus

শিল্প প্রবৃদ্ধিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে ব্যবসায়ী নেতাদের সহায়তা প্রদানে প্রধান উপদেষ্টার আশ্বাস

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের শিল্প প্রবৃদ্ধিকে নতুন

পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক টেস্ট জয় বাংলাদেশের

পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক টেস্ট জিতলো বাংলাদেশ। দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম

বন্যার্তদের জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের এক দিনের বেতনের অর্থ প্রদান

বন্যার্তদের সহায়তায় ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও এর অধীন দপ্তর-সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারিদের

ইসরায়েলিদের জন্য ভিসা সীমিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র

ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের ২০টিরও বেশি

মেসিকে ছাড়াই মায়ামির সহজ জয়

লিওনেল মেসি ছিলেন না দলে, কিন্তু ইন্টার মায়ামির আক্রমণ যেন

বাংলাদেশের ব্যাপারটা একটু ভিন্ন, বলছেন জয়শঙ্কর

ভারত তার প্রতিবেশী দেশগুলোর রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে না