বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) শিক্ষার্থীকে যৌন নিপিড়ন ও ফলাফল জালিয়াতির অভিযুক্ত রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. তানজিউল ইসলাম জীবন ও পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. রশীদুল ইসলামের কুশপুত্তলিকায় জুতাপেটা করেছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা জানায়, শুধু একজন দুইজন নয় সকল নারী লোভী নিপিড়ক শিক্ষকদের যথাযথ শাস্তির দাবিতে এই প্রতিবাদ।
সোমবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষ্ণচূড়া সড়কে নারী লোভী শিক্ষকদের শাস্তির দাবিতে এই ব্যতিক্রমী প্রতিবাদের আয়োজন করা হয়।
এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে দেখা যায়, অভিযুক্ত শিক্ষকদের কুশপুত্তলিকা তৈরি করে হাফ প্যান্ট, টি শার্ট ও জুতার মালা পরায় দিয়ে খুঁটিতে বেঁধে রাখা রাখা হয়েছে। কুশপুত্তলিকার গায়ে লেখা আমি নারী লোভী নিপিড়নকারী শিক্ষক। এরপর শিক্ষার্থীরা একে একে কুশপুত্তলিকায় জুতা পেটা করছে।
এ বিষয়ে বেরোবি শিক্ষার্থী রহমত আলী বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও রেজাল্ট টেম্পারিংসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু এর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। আমরা বলবো অবিলম্বে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী নিপিড়নের যে চর্চা তা বন্ধ করার যে চর্চা তা বন্ধ করতে বিশেষ সেল গঠন করে, এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
বেরোবি শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান বলেন, আমাদের দাবি একটাই অপকর্মের সাথে যে সকল শিক্ষক জড়িত তদন্ত সাপেক্ষে তাদের যেন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে ভবিষ্যতে কোনো শিক্ষক এ ধরনের ন্যাক্কারজনক কাজ করতে সাহস না পায়। নম্বর কমিয়ে দেওয়ার ভয়ে অনেক শিক্ষার্থী কথা বলতে চায় না।
এর আগে গত ১৩ এপ্রিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো. তানজিউল ইসলাম জীবন ও ওই বিভাগের এক ছাত্রীর কথোপকথোনের অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়। ফাঁস হওয়া অডিও ক্লিপে শোনা যায় ওই শিক্ষক শিক্ষার্থীকে বলছেন ৩.১৬ রেজাল্ট থেকে ৩.৭০ করে দিয়েছেন এবং শিখিয়ে দিচ্ছেন কেউ জিজ্ঞাসা করলে কি বলতে হবে। তিনি ওই ছাত্রীকে বলছেন তুমি প্রথমে চাইছিলা ‘স্যার আমাকে ফাস্ট করে দেন।’ আমি দিতে পারতাম। আজকে কি জবাবটা দিতাম? তিনি আরো বলেন, একদম সাইলেন্ট। ছাত্রী বলেন, আমি চুপচাপ আছি। এছাড়াও ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে একাধিক শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে ড. তানজিউল ইসলাম জীবন সাথে যোগাযোগ করা হলে, তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এছাড়াও গত ১৯ এপ্রিল পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রশীদুল ইসলামের বিরুদ্ধে এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠে। তার সাথে মেসেঞ্জারে এক ছাত্রীর কথোপকথনের স্ক্রিনশট ফাঁস হয়। স্ক্রিনশটে দেখা যায় ওই শিক্ষক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির নানাভাবে চেষ্টা করেছেন এবং বিভিন্ন অজুহাতে বাড়িতেও ডেকেছেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানান, শিক্ষক রশীদুল ইসলাম নানাভাবে উত্যক্ত করতো। ম্যাসেঞ্জারে আমার শাড়ি পরা ছবি চেয়েছিলেন, কিন্তু নানাভাবে আমি তা এড়িয়ে গিয়েছি। এরপর উনি আমাকে নক দিয়ে ওনার চেম্বারে ডেকে ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘তুমি কি জানো ক্লাসে যখন পড়াই, আমার পড়ানো থেকে তোমার দিকে মনোযোগ বেশি থাকে? তোমাকে দেখলে আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি না। তুমি এতো দূর থেকে পড়াশোনা করতে এসেছ, কোনোভাবে যদি তোমার রেজাল্ট খারাপ হয় বাবা-মায়ের কাছে কী জবাব দেবে?’ এরপর তিনি আমাকে বলেন, ‘তোমার কোনো আইডিয়া আছে একজন ভার্সিটির টিচার সম্পর্কে? তোমার পাস-ফেল সবকিছুই আমার হাতে। আমি যেভাবে বলব, তোমাকে সেভাবেই শুনতে হবে। এভাবে তোমার সিনিয়ররাও পাস করে গেছে।’ একদিন তিনি কথা বলতে বলতে একসময় এসে আমাকে ব্যাড টাচ করার চেষ্টা করেন। তখন আমি তাকে ধাক্কা দিয়ে বের হয়ে আসি।’
এ বিষয়ে ড. রশীদুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শৃঙ্খলা বোর্ডের সদস্য সচিব প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো ফেরদৌস রহমান জানান, পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে পরীক্ষার ফলাফল টেম্পারিংয়ের অভিযোগ এসেছে। এ বিষয়ে আমরা একটা তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি এবং কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য সময় বেধে দেওয়া হয়েছে। যৌন নিপিড়নের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, এ বিষয়ে এখনো কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।