পিরিয়ড ফ্লু কি?
অনেক মহিলাই ঋতুস্রাবের এক বা দুই সপ্তাহ আগে বা ঋতুস্রাবের সময় ফ্লুর মতো লক্ষণ অনুভব করেন। একেই পিরিয়ড ফ্লু বলে। যদিও এটি আসলে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমণ নয়, তবে এর লক্ষণগুলি ফ্লুর মতোই হতে পারে। এই লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্লান্তি, দুর্বলতা, হালকা জ্বর, মাথাব্যথা, শরীর ও পেশীতে ব্যথা, ঠান্ডা লাগা এবং মেজাজ পরিবর্তন।
পিরিয়ড ফ্লু কেন হয়?
ঋতুচক্রের সময় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে মূলত পিরিয়ড ফ্লু হয়। ডিম্বস্ফোটনের পর প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। কিন্তু যখন ডিম নিষিক্ত হয় না, তখন এই হরমোনের মাত্রা হঠাৎ কমে যায়। এই হঠাৎ পরিবর্তনের ফলে শরীরে প্রদাহ হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে মহিলারা ক্লান্তি এবং ফ্লুর মতো লক্ষণ অনুভব করেন।
পিরিয়ড ফ্লুর লক্ষণগুলি কী কী?
ক্লান্তি
দুর্বলতা
হালকা জ্বর
মাথাব্যথা
শরীর ও পেশীতে ব্যথা
ঠান্ডা লাগা
মেজাজ পরিবর্তন
খিটখিটে ভাব
অনিদ্রা
পিরিয়ড ফ্লু একটি চিকিৎসাগত অবস্থা নয় এবং কোনো মাইক্রোবের কারণে হয় না, তাই এর কোনো নিরাময় নেই। তবে, কিছু সহজ কিন্তু কার্যকর ঘরোয়া প্রতিকার ব্যবহার করে লক্ষণগুলি উপশম করতে পারেন। এখানে কিছু বিস্তারিত সমাধান দেওয়া হল যা আপনার অবস্থাকে সাহায্য করতে পারে।
পেটের ব্যথা ও ক্র্যাম্প:
গরম পানি ব্যবহার করুন: পেটের নিচে গরম পানি বা হিটিং প্যাড রাখুন। এটি পেশী শিথিল করতে এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
হালকা ম্যাসাজ করুন: পেটের নিচে হালকা ম্যাসাজ করুন। এটি রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে।
বিশ্রাম:
পর্যাপ্ত ঘুম নিন: যতটা সম্ভব বিশ্রাম নিন। ঘুমের অভাব আপনার শরীরকে দুর্বল করতে পারে এবং লক্ষণগুলি আরও খারাপ করতে পারে।
সারা দিন নিজেকে ব্যস্ত রাখুন: সারা দিন নিজেকে আপনার প্রিয় জিনিসগুলো দিয়ে ব্যস্ত রাখুন। এটি তनाव কমাতে এবং মনোযোগ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে।
হাইড্রেশন:
প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন: বমি এবং ডিসেন্ট্রি শরীরে পানির অপচয় করতে পারে। তাই প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।
ফুটানো পানি পান করুন: যদি সম্ভব হয়, ফুটানো পানি পান করুন। এটি পেটের সমস্যা কমাতে সাহায্য করবে।
পুষ্টি:
সুষম খাবার খান: ফল, সবজি, বাদাম, শস্য এবং প্রোটিন জাতীয় খাবার খান। এগুলো আপনার শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করবে।
ফাইবারযুক্ত খাবার খান: ফাইবারযুক্ত খাবার খান, যেমন পুরো শস্য, ফল, সবজি এবং বাদাম। এগুলো হজমে সাহায্য করে এবং পেটের সমস্যা কমাতে পারে।
ক্যাফিন এবং অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন: ক্যাফিন এবং অ্যালকোহল পেটের সমস্যা বাড়াতে পারে। তাই এই পানীয়গুলো এড়িয়ে চলুন।
স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট:
চাপ কমান: সারা দিন নিজেকে আপনার প্রিয় জিনিসগুলো দিয়ে ব্যস্ত রাখুন। ধ্যান, যোগ বা অন্যান্য শিথিলকরণ কৌশল অবলম্বন করুন।
পর্যাপ্ত ঘুম নিন: ঘুমের অভাব তनाव বাড়াতে পারে। তাই পর্যাপ্ত ঘুম নিন।
স্ক্রিন টাইম কমান: স্ক্রিন টাইম কমান, কারণ এটি তनाव বাড়াতে পারে এবং ঘুমকে বাধা দিতে পারে।
কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন?
যদি আপনার জ্বর খুব বেশি হয়।
যদি আপনার পেটে তীব্র ব্যথা হয়।
যদি আপনার রক্তপাত খুব বেশি হয়।
যদি আপনার শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
যদি আপনার কোনো সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দেয়।
ডাক্তারের পরামর্শ:
যদি এই সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়ার পরও যদি আপনার জ্বর, পেটে তীব্র ব্যথা, অতিরিক্ত রক্তপাত, শ্বাস নিতে কষ্ট বা অন্য কোনো সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
মনে রাখবেন:
পিরিয়ড ফ্লু সাধারণত গুরুতর কোনো সমস্যা নয় এবং কয়েক দিনের মধ্যে নিজে থেকেই ভালো হয়ে যায়। তবে উপরের উল্লেখিত লক্ষণগুলি যদি গুরুতর হয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।