বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশ হচ্ছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
তিনি বলেন, ‘৫/৮’ এর পট পরিবর্তনের সুযোগ আমাদের সকলকে নিতে হবে। এ দেশটা কারো একার নয়। ১৯৭১ সালে আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলাম। স্বাধীনতা’র মূল চেতনা ছিলো বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থেই একটা অসম্প্রদায়িক সমাজ বিনির্মাণ করা এবং সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক একটা রাষ্ট্র গড়ে তোলা। সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি।’
বিএনপি মহাসচিব আজ বুধবার রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের কেন্দ্রীয় পূজা ম-প পরিদর্শনে গিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি আজকে এখানে এসেছি আপনাদের সাথে শারদীয় দুর্গোৎসবের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে। আমার দল, দলের চেয়ারপার্সন ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে আপনাদেরকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। এই শারদীয় দুর্গা পূজা আপনাদের জীবনে অনাবিল আনন্দ নিয়ে আসুক, একটা সুন্দর ভবিষ্যত নির্মাণ করুক, বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থেই একটা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত হয়ে থাকুক এটাই কামনা করছি, এ প্রত্যাশা করছি।’
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। ষষ্ঠী তিথিতে দেবীর আগমনের আমন্ত্রণের মধ্যদিয়ে শুরু হওয়া দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতার প্রথম দিনে বুধবার সকালে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পূজামন্ডপে আসেন বিএনপি মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
ঢাকেশ্বরী পূজা ম-পে পৌঁছালে মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব, সাধারণ সম্পাদক তাপস চন্দ্র পাল, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর ও সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মাসহ পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ বিএনপি মহাসচিবকে স্বাগত জানান।
মন্দিরে প্রবেশ করে মির্জা ফখরুল পূজামন্ডপে পরিদর্শন করেন এবং আগত পূণ্যার্থীদের শুভেচ্ছা জানান।
তিনি বলেন, ‘যে দেবীর আপনারা আরাধনা করছেন, যাকে আপনারা মা দুর্গা বলেন, সেই দেবীর আর্বিভাব হয়েছিলো অসুরকে বধ করার জন্যে, অন্যায়কে দূর করার জন্যে এবং মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব, বন্ধুত্ব ও সৌহার্দ প্রতিষ্ঠার জন্যে। হিংসা-প্রতিশোধ-প্রতিহিংসা দূর করে ভালোবাসা প্রেমের সমাজ নির্মাণ করার জন্যে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে সেই সুযোগ আমাদের সামনে উপস্থিত হয়েছে। আমরা ভয়াবহ দানবীয় শক্তিকে পরাজিত করে সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছি, যেখানে আমাদের একটা নতুন বাংলাদেশ নির্মাণ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে আমাদের মধ্যে কোনো ভেদ থাকবে না, ভেদাভেদ থাকবে না, ধর্মান্ধতা থাকবে না, সাম্প্রদায়িকতা থাকবে না। এক বর্ণের সাথে আরেক বর্ণের কোনো প্রতিশোধ-প্রতিহিংসা বা ঘৃণার কোনো রাজনীতি থাকবে না।’
সাবেক প্রধান মন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলে অবিভক্ত ঢাকা সিটির মেয়র প্রয়াত সাদেক হোসেনসহ মন্ত্রিসভার সদস্যদের উদ্যোগে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের কথাও তুলে ধরেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা যে ৮ দফার কথা বলেছেন সেই ৮ দফা আমরা বিবেচনা করছি। এর যে মূল বিষয়টি সেটার প্রতি আমাদের সর্বাত্মক সহানুভূতি রয়েছে। আমরা আপনাদের এটুকু বলতে পারি, অতীতে যেমন আমরা আপনাদের প্রতিটি সমস্যায় পাশে এসে দাঁড়িয়েছি, ঠিক একইভাবে আগামীতেও আপনাদের সঙ্গে থাকব।’
তিনি বলেন, ‘‘দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য একটি রাজনৈতিক দল-আমি নাম বলতে চাই না, তারা বরাবরই বলে থাকে তারাই নাকি এখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ত্রাণ কর্তা। কিন্তু আপনারা যদি দেখেন অতীতে যতগুলো দুর্ঘটনা ঘটেছে তার নেতৃত্বে কিন্তু তাদের লোকেরাই ছিলো। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে আপনাদের সস্প্রদায়ের মানুষের যত জমি-জমা, সম্পত্তি দখল করে নেয়া হয়েছে, তার মূলেও তারা ছিল।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ভবিষ্যতে জনগণের রায় নিয়ে তার দল সরকার গঠন করলে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নের প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করে বিচারের ব্যবস্থা করা হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বিএনপির যুব বিষয়ক সহ সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী, ধর্ম বিষয়ক সহ সম্পাদক অমলেন্দু দাশ অপু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন প্রমুখ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
বিএনপি নেতা মীর সরাফত আলী সপু, যুব দলের ইসহাক সরকার, হামিদুর রহমান হামিদ, হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের সদস্য সচিব তপন দেসহ অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
পরে বিএনপি মহাসচিব দলের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বনানী পূজামন্ডপও পরিদর্শন করেন এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।