সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার ও আদালতে জামিন নামঞ্জুরের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ভারতের বিরোধী রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক বার্তায় এই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি।
ইসকনের পুরোহিত চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় গ্রেপ্তারের ঘটনাকে ক্রমবর্ধমান ভীতিকর পরিবেশের একটি উদ্বেগজনক উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন কংগ্রেসের এই নেত্রী। এক্সে দেওয়া বার্তায় প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেছেন, ‘‘প্রতিবেশী বাংলাদেশে হিন্দুদের বিরুদ্ধে ‘চলমান সহিংসতা’ অত্যন্ত উদ্বেগজনক।’’
তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে ইসকন মন্দিরের সাধুকে গ্রেপ্তার করার খবর এবং সংখ্যালঘু হিন্দুদের বিরুদ্ধে অব্যাহত সহিংসতা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আমি কেন্দ্রীয় সরকারকে এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ এবং বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টি বাংলাদেশের সরকারের কাছে জোরালোভাবে উত্থাপন করার জন্য আহ্বান জানাই।’’
এর আগে, একই দিনে কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তারের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দেওয়া হয়। বিবৃতিতে বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ‘‘নিরাপত্তাহীনতা’’ নিয়ে দলটির পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
কংগ্রেসের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিসিটি বিভাগের চেয়ারম্যান পবন খেরা এক বিবৃতিতে এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ভারত সরকার বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাবে বলে প্রত্যাশা করছে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস।
পবন খেরা বলেন, ‘‘বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাহীনতার পরিবেশ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে কংগ্রেস। ইসকন সন্ন্যাসীকে গ্রেপ্তারের ঘটনা এই নিরাপত্তাহীনতার সর্বশেষ উদাহরণ।’’
সোমবার বিকেলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাওয়ার সময় শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষায়িত গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার করেন। পরে সড়কপথে আন্তর্জাতিক শ্রীকৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) আলোচিত সাবেক এই সংগঠককে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে পাঠানো হয়। সোমবার রাতে তাকে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা কার্যালয়ে রাখা হয়।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় দায়ের হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে মহানগর-ষষ্ঠ কাজী শরীফুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হয় চিন্ময় কৃষ্ণকে। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। দুপুরের দিকে চিন্ময় কৃষ্ণের অনুসারী বিক্ষোভকারীরা আদালত এলাকায় মসজিদ-দোকানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা শুরু করেন। বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।
একই সঙ্গে আইনজীবীসহ সাধারণ মানুষের ওপরও হামলা করেন চিন্ময় কৃষ্ণের অনুসারীরা। হিন্দু এই নেতার মুক্তির দাবিতে আন্দোলনকারীদের হামলায় সাইফুল ইসলাম আলিফ নামে চট্টগ্রামে এক আইনজীবী নিহত হন।
চিন্ময় কৃষ্ণের গ্রেপ্তার এবং জামিন নামঞ্জুরের ঘটনায় মঙ্গলবার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, “বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতন জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার ও তাকে জামিন না দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। বাংলাদেশে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুর ওপর উগ্রবাদীদের একাধিক হামলার পর তাকে গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটল। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ; একই সঙ্গে মন্দিরে চুরি ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।”
পরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে ভারতের মন্তব্যের কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়। এতে বলা হয়, ‘‘চিন্ময় কৃষ্ণকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি দুই প্রতিবেশীর মধ্যে বন্ধুত্ব ও বোঝাপড়ার চেতনার পরিপন্থি।’’