বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে এবার রক্ত দিয়ে ব্যানার লিখে মানববন্ধন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বস্তরের শিক্ষার্থীবৃন্দ’ -এর ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
এসময় তিনজন শিক্ষার্থী সিরিঞ্জের মাধ্যমে শরীর থেকে রক্ত বের করেন। পরে সেই রক্ত দিয়ে সাদা কাপড়ে ‘পোষ্য কোটা নিপাত যাক’ লিখে ব্যানার তৈরি করেন। সেই ব্যানারে রক্তমাখা হাতের ছাপও রাখেন শিক্ষার্থীরা। পরে সেই ব্যানার নিয়ে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা ‘রক্ত গেছে আরও যাক, পোষ্য কোটা নিপাত যাক’, ‘মেধাবীরা মুক্তি পাক, পোষ্য কোটা নিপাত যাক’ সহ বিভিন্ন লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে কোটা একটি মীমাংসিত বিষয়। তবুও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পোষ্য কোটার মতো একটি অনৈতিক বিষয়কে জিইয়ে রেখেছে। জুলাই বিপ্লবে আমার ভাইয়ের তাজা রক্তের ঘ্রাণ হয়তো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নাকে পৌঁছায় নাই। তাই আমরা আবারও গায়ের রক্ত বের করে ব্যানার বানিয়ে প্রশাসন ভবনের সামনে টাঙিয়ে দেব। যাতে সেখানে ঢুকতে গেলে কর্তাব্যক্তিদেরে নাকে আমার ভাইয়ের রক্তের ঘ্রাণ পৌঁছায়।
কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী আমানউল্লাহ আমান বলেন, ন্যায্য দাবিতে শিক্ষার্থীরা কী ঘটাতে পারে তা আমরা জুলাই বিপ্লবে দেখেছি। জুলাই বিপ্লবের শহীদদের রক্তের কথা স্মরণ করিয়ে দিতেই আমরা আজ এখানে দাঁড়িয়েছি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ন্যায্যতার দাবির পক্ষে থাকতে হবে। পোষ্য কোটা বাতিলের বাইরে কোনো অপশন নেই। এটি তারা কীভাবে করবে সেটি তাদের ব্যাপার। কিন্তু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য যে থাকছে না সেটি আমরা আজকে রক্ত দিয়ে লিখে দিয়ে গেলাম।
রক্ত দিয়ে ব্যানার লেখা শিক্ষার্থী আল শাহরিয়ার শুভ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়ে দিতে চাই আজকের পর থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো পোষ্য কোটা আমরা মেনে নেব না। পোষ্য কোটার মতো একটি নিকৃষ্ট কোটা আমরা অবিলম্বে বাতিল করার দাবি জানাচ্ছি। আমরা ধারণা করছি, চব্বিশের অভ্যুত্থানের শহীদ-আহত ভাইদের রক্তের গন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের নাকে পৌঁছাচ্ছে না। তাই আজকে আমরা রক্ত সংহতি জানাচ্ছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী কামরুল ইসলাম সজীব বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের ফলে সমস্ত বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল হয়ে যাওয়ার কথা। নতুন করে পোষ্য কোটা বাতিলের জন্য আমাদের এখানে দাঁড়ানোর কথা না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিভিন্ন সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি করছে যে তারাও পোষ্য কোটা চায় না। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে প্রশ্ন আপনারা যদি না চান, তাহলে কেন পোষ্য কোটা বাতিল করছেন না? একদিকে তারা আমাদের স্থবির রাখার চেষ্টা করছে, অন্যদিকে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্থবির রাখার জন্য যে গেমপ্ল্যান সাজানোর দরকার সেটা তারা করছে।
এর আগে রাবিতে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন, বিতর্ক, কোটার প্রতীকী কবর রচনা এবং আমরণ অনশনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষর্থীরা। তবে কোটা সংস্কারে রিভিউ কমিটি গঠন করলেও এখন পর্যন্ত কোনো ফলপ্রসূ পদক্ষেপ নিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বাঁধা হিসেবে ‘শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বিরোধিতা’কে দায়ী করছেন তারা।