ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার শারমীন বেগম (৪৭) ফারহান রনি নামে এক যুবকের হাতে নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। তিনি ফারহানের পরিবারের সঙ্গে পারিবারিকভাবে ঘনিষ্ঠ ছিলেন। মাঝে মাঝে তাদের বাড়ির কাজ করতেন। তাকে বাবার অসুস্থতার কথা বলে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়।
শারমীন বেগম ছিলেন দরিদ্র পরিবারের এক সংগ্রামী নারী। তার স্বামী নুরুল ইসলাম দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন। শারমীন ফারহানের ফুফুর জায়গায় বাস করতেন এবং ফারহানকে ছোটবেলা থেকেই কোলে-পিঠে করে মানুষ করেছেন।
ফারহানের দাবি, শারমীন তাকে তাবিজ করেছেন এবং তার সম্পত্তি দখলের ষড়যন্ত্র করছেন। শারমীন তার মেয়েকে ফারহানের সঙ্গে বিয়ে দিতে চাইছেন। এসব কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে ফারহান এই হত্যাকাণ্ড ঘটান।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ফারহান স্বীকার করেন যে, বাবার অসুস্থতার কথা বলে তিনি শারমীনকে ডেকে নেন। এরপর ছুরি দিয়ে গলা কেটে তাকে হত্যা করেন। তারপর পাশের জমিতে শারমীনের মাথা পুঁতে রাখেন এবং শরীরের বাকি অংশ একটি কম্বলে পেঁচিয়ে আগুন লাগিয়ে দেন।
আখাউড়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ছমিউদ্দিন জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকারোক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
ঘটনার দিন সকালে স্থানীয়রা ফারহানকে আগুনের পাশে ঘুরতে দেখে সন্দেহ করেন। তার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হলে তিনি হত্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেন এবং তাদের ওপর চড়াও হন। এরপর স্থানীয়রা ফারহানকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
এ ঘটনায় নিহতের বড় মেয়ে রুমা আক্তার বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। তবে মামলায় নির্দিষ্ট কোনো হত্যার কারণ উল্লেখ করা হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, ফারহান অসংলগ্ন কথা বলছেন এবং ঘটনার বিষয়ে আরও তথ্য বের করার চেষ্টা চলছে।
নিহতের পরিবার এবং স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ফারহান শারমীনের এক মেয়েকে বিয়ে করতে চাইতেন। কিন্তু ফারহানের মাদকাসক্ত জীবনের কারণে পরিবার এই বিয়েতে সম্মত হয়নি। অন্যদিকে চুরি করা হাঁস রান্না করে না দেওয়ার বিষয়েও ফারহান ক্ষুব্ধ ছিলেন। এই দুই কারণ মিলে তিনি এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে পোড়া দেহাবশেষ এবং বিচ্ছিন্ন মাথা উদ্ধার করেছে। এলাকাবাসী এ ঘটনায় শোকাহত। দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে ফারহানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ।