বগুড়ায় পুলিশের গুলি খেয়ে মাটিয়ে লুটিয়ে পড়া নুসরাত জাহান জেরিনকে প্রথমে সবাই মৃত ভেবেছিলেন। কিন্তু না, জেরিন আসলে গুলি খেয়ে অসুস্থ হয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। মারা যাননি। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে আলৌকিভাবে বেঁচে ফেরা নুসরাত জাহান জেরিনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ১৮ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, একটি মেয়ে পুলিশের তাড়া খেয়ে হঠাৎ রাস্তার ওপর ঢলে পড়ে গেছেন। সঙ্গে থাকা অন্যরা মেয়েটিকে উদ্ধারের চেষ্টা করছেন। এ সময় পুলিশ সেখানে যায়। পরে তার সহপাঠিরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। ভিডিওটি অনুসন্ধান করে জানা যায়, এটি বগুড়ার শহরের সাতমাথা বীরশ্রেষ্ঠ স্কয়ারসংলগ্ন ট্রাফিক আইল্যান্ড এলাকার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালের ভিডিও এটি। ১৮ জুলাই বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশ যে মারমুখী ছিল, ভিডিওতে সেই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। ওই সময় বগুড়ায় বিক্ষোভে অংশ নেয়া মেয়েটি গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। পরে চিকিৎসায় ভালো হন তিনি। বর্তমানে সুস্থ আছেন তিনি। তার নাম নুসরাত জাহান জেরিন। পড়াশোনা করেন রাজধানীর বেসরকারি শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজির সমাজবিজ্ঞান ও নৃতত্ত্ব বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে।
নুসরাতের বাবা জুয়েল আলম ব্যবসায়ী। মা নাসরিন আলম। এই দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে নুসরাত জাহান বড়। বগুড়ার উপশহর এলাকায় নুসরাতের বাসা। নুসরাত জাহান জেরিন দাবি করেন, ১৮ জুলাই মিছিলে যোগ দেওয়ার পর তিনি সাতমাথায় পুলিশের হামলার শিকার হন। চারটি রাবার বুলেট বিদ্ধ হয় তার শরীরে। প্রথমে তাকে বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে এবং পরে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পুলিশের ভয়ে তিনি ওই সন্ধ্যায় হাসপাতাল ছেড়ে বাড়িতে চলে আসেন।
আন্দোলনে যোগ দেওয়ার বিষয়ে নুসরাত জাহান বলেন, রংপুরে আবু সাঈদ হত্যার পর আর ঘরে বসে থাকতে পারলাম না। মা-বাবার উদ্দেশে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে গত ১৮ জুলাই সকাল নয়টার দিকে কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বের হন। দত্তবাড়ি থেকে সাতমাথার দিকে ছাত্রদের বিশাল মিছিল বের হয়। সদর থানার সামনে পুলিশ মিছিলে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। সাতমাথায় পৌঁছানোর আগে কয়েকটি কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। মিছিল নিয়ে আমরা সাতমাথায় পৌঁছামাত্র পুলিশ শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। মিছিল থেকে ছত্রভঙ্গ হয়ে প্রথমে জিলা স্কুলে আশ্রয় নিই। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাতমাথায় যেখানে ভিডিওটা করা, সেখানে পৌঁছালে একজন পুলিশ কর্মকর্তা খুব বাজে ভাষায় গালমন্দ করেন। পুলিশ ছাত্রদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে ছুড়তে তেড়ে আসে। এ সময় একটি রাবার বুলেট ঊরুতে লাগলে ব্যথায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। কিছুক্ষণ পর সুস্থ বোধ করলে আবারও আন্দোলনে যোগ দিই। এ সময় পর পর কয়েকটি রাবার বুলেট পায়ে এসে লাগলে আহত হই। প্রথমে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে এবং পরে সেখান থেকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন আসেন।
নুসরাত জাহান বলেন, হাসপাতাল থেকে বাড়িতে পৌঁছার পর রাতে তিনি জানতে পারেন যে তার মৃত্যুর খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক বন্ধু তাকে কল করেন। তিনি তাদের নিজের বেঁচে থাকার কথা জানান। আন্দোলনে তার অবদানের জন্য স্থানীয়রা তাকে উপাধি দিয়েছে অগ্নিকন্যা।
বগুড়ার পুলিশ সুপার (এসপি) জাকির হাসান বলেন, ‘ভিডিওটি ইতিমধ্যে দেখেছি। ভিডিওটি ১৮ জুলাই বগুড়ার সাতমাথায় করা। মেয়েটি এখন সুস্থ আছেন বলে জেনেছি।