বাংলাদেশ ব্যাংক সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করেছে। বিতর্কিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলমের ব্যাংকটিতে প্রভাব কমাতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
নতুন পর্ষদে একজন উদ্যোক্তা শেয়ারধারীকে পরিচালক এবং চারজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ করা হয়েছে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ব্যাংকের পরিচালনায় আরও বৈচিত্র্য আনা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার লক্ষ্য রয়েছে।
আজ বাংলাদেশ ব্যাংক এক জরুরি আদেশ জারি করে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে বাতিল করে দিয়েছে। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। অর্থাৎ, বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ আর ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংক সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে বাতিল করে নতুন পর্ষদ গঠনের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো ব্যাংকের আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা করা, ব্যাংকিং সুশাসন নিশ্চিত করা এবং সর্বোপরি জনস্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে নতুন করে অবসরপ্রাপ্ত মেজর মো. রেজাউল হককে পরিচালক নিযুক্ত করা হয়েছে। উল্লেখ্য, তিনি এই ব্যাংকের একজন উদ্যোক্তা শেয়ারধারীও।
নতুন স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মাকসুদা বেগম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্সের অধ্যাপক এম সাদিকুল ইসলাম, রূপালী ব্যাংকের সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোরশেদ আলম খন্দকার এবং হিসাববিদ মো. আনোয়ার হোসেনকে নিযুক্ত করা হয়েছে।
নতুন এই পরিচালকদের মধ্য থেকে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক এক পদক্ষেপে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এস আলম গ্রুপের প্রভাবমুক্ত হয়েছে। এর আগে, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশকেও একইভাবে এই গ্রুপের দখল থেকে মুক্ত করা হয়েছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক উভয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে স্বতন্ত্র পরিচালকদের নিয়ে নতুন পর্ষদ গঠন করেছে। এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হলো ব্যাংকগুলোকে সুশাসনের আওতায় আনা এবং আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা করা।
চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপের মালিকানায় গেলে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে দেখা দিল গভীর সংকট। ২০১৭ সালে এস আলম গ্রুপের মালিক সাইফুল আলমের জামাতা বেলাল আহমেদ ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ব্যাংকটি নিয়ে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
মালিকানা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং অন্যান্য অভিজ্ঞ পরিচালকদের বাদ দেওয়া হয়। এরপর থেকেই ব্যাংক থেকে নানাভাবে অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, এভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ বের করে নেওয়ার ফলে ব্যাংকটি আর্থিকভাবে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে, ব্যাংকটি এখন আর্থিক সংকটে পড়েছে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে রক্ষিত চলতি হিসাবেও ঘাটতির মুখোমুখি হয়েছে।সেই সঙ্গে এই ব্যাংকের চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের পটিয়ার বাসিন্দাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
১১ আগস্ট, ব্যাংকটির কিছু শেয়ারহোল্ডাররা সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংককে এস আলম গ্রুপের কবল থেকে মুক্ত করার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন। এই মানববন্ধনের মধ্য দিয়ে ব্যাংকের বর্তমান পরিস্থিতি এবং এর পেছনে কার্যকরী শক্তিশালী একটি গ্রুপের কারসাজি নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে।
এরপর এক সংবাদ সম্মেলনে শেয়ারহোল্ডাররা অভিযোগ করেছেন যে, এস আলম গ্রুপের মালিক সাইফুল আলম এবং তার সহযোগীরা ব্যাংকের আমানতকারীদের হাজার হাজার কোটি টাকা নামে-বেনামে তুলে বিদেশে পাচার করেছেন। এই অভিযোগের মাধ্যমে ব্যাংকের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং আমানতকারীদের অর্থের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়ে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এস আলম গ্রুপের প্রভাবের মধ্যে থাকা এই ব্যাংককে এবার নতুন করে গড়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের এই সিদ্ধান্তকে ব্যাংকিং খাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এটি স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।