বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ আজ বলেছেন, আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে ভারত আওয়ামী লীগ ও তার দোসরদের বাংলাদেরশের ক্ষমতায় চায়।
তিনি বলেন, ‘অতিসম্প্রতি ভারতের কথায় এটাই প্রমাণিত হচ্ছে যে তারা আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগীদের ক্ষমতায় চায় যাতে তারা বাংলাদেশে আধিপত্য বিস্তার করতে পারে। বাংলাদেশ এবং এর জনগণের সমর্থন ও বন্ধুত্বের প্রয়োজন ভারতের নেই।’
তিনি বলেন, ভারত অত্যাচারী ও গণতন্ত্র হত্যাকারী শেখ হাসিনাকে দিল্লিতে তাদের অতিথি করেছে।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন রিজভী।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম এ মালেকসহ অনেক বিএনপি নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে তিনি সেখানে জিয়াউর রহমানের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে ফাতেহা পাঠ করেন।
মৌলভীবাজারের কিশোরী স্বর্ণা দাস ও ফেলানী খাতুন সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশের জনগণের প্রতি ভারতের ঘৃণা প্রদর্শিত হয়েছে।
কিন্তু, অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের অনেক নেতা সহজেই বাংলাদেশের সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে পৌঁছেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আ. লীগ নেতাদের ভারতের বাজারে কেনাকাটা করতে দেখা গেছে, কেউ ভারতে হযরত নিজামউদ্দিন আউলিয়ার মাজার জিয়ারত করছেন।
এ থেকে এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে, ভারতের নীতিনির্ধারকরা বাংলাদেশের মানুষকে পছন্দ করেন না বরং তারা আওয়ামী লীগ ও এর নেতাদের পছন্দ করেন।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমান এবং বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মনিরুল ইসলামসহ দলটি সমর্থিত পুলিশরা সহজেই ভারতের অনেক জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। যা থেকে মনে হয়, এই লোকদের পাসপোর্ট এবং ভারতীয় ভিসার প্রয়োজন নেই।
কিন্তু, যখন বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিকদের কথা আসে, তখন তাদের (বাংলাদেশিদের) ভিসা, পাসপোর্টের প্রয়োজন হয় এবং তাদের অনেক প্রক্রিয়া শেষ করতে হয় বলে উল্লেখ করেন রিজভী।
তিনি বলেন, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্যকে দুই মাস ধরে জোরপূর্বক নিখোঁজ করার পর তাকে ভারতে পাওয়া যায়। ভারত তাকে রেহাই দেয়নি বরং তাকে মামলার মুখোমুখি করা হয় এবং পরে তাকে সেখানে কারাগারে পাঠানো হয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ভারতের পক্ষপাতিত্বের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা ছাড়া বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে ভারত একপেশে নীতি পালন করেছে।
দুর্গাপূজা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শোনা যায় প্রতিবেশী দেশ ভেবেছিল বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা হবে না। নানাভাবে প্রতিবেশী দেশের গণমাধ্যম ও নীতিনির্ধারকরা বাংলাদেশের জনগণের মধ্যকার সম্প্রীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করতে চায়।
তবে এ দেশে সব সময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিরাজ করে বলেই দুর্গাপূজার বিজয়া দশমী শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপিত হয়েছে।
এ ছাড়া বিএনপি, তার সহযোগী সংগঠন ও অন্যান্য দল দুর্গাপূজা উৎসবে স্থায়িত্ব বজায় রাখার জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছে, যেমন তারা মন্দির ও পূজাম-প পাহারা দিয়েছে। যেখানে আওয়ামী লীগের শাসনামলে ঘাতক হাসিনার এজেন্টরা মন্দির ও পূজাম-পে নির্মমভাবে হামলা চালালেও এর দায় বিএনপিসহ অন্যান্য সংগঠনের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা এম এ মালেক সম্প্রতি দেশে ফিরে এসেছেন উল্লেখ করে রিজভী বলেন, মালেক ইউরোপের দেশগুলো সফরে গিয়ে ফ্যাসিবাদ, নিষ্ঠুরতা ও দুঃশাসনের প্রতীক হাসিনার দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সবসময় প্রতিবাদ করায় ১৭ বছর দেশে ফিরতে পারেননি।
তিনি বলেন, বিদেশে বসে মালেক রাজপথে নেমে আন্দোলন করেছেন এবং জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়ে তাদের ওপর শেখ হাসিনার নির্যাতনের সমালোচনা করেন।
মালেকের মতো বিএনপির নিবেদিতপ্রাণ নেতাদের কারণে জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী হওয়া শেখ হাসিনার জুলুম, দুঃশাসন ও নির্যাতন আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সামনে তুলে ধরা সম্ভব হয়েছে।