ইসলামী ছাত্রশিবির ও অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ড. শফিকুর রহমান বলেছেন, আরেকটি যুদ্ধ করার জন্য তোমাদের তৈরি হতে হবে। সে যুদ্ধটা হচ্ছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সবার আগে মেরামত করা।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সদস্য সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াত আমির বলেন, শিক্ষা যেহেতু জাতির মেরুদণ্ড, এ জায়গায় তোমাদের শপথ নিতে হবে। আর কোনো চাপাতি কোম্পানিকে ওখানে ঢুকতে দেওয়া হবে না। কোনো গাঁজাখোরকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। হাতে অস্ত্র নিয়ে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। গণরুম যারা কায়েম করে তাদেরও ঢুকতে দেওয়া হবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি যারা করবে তাদেরও কোনো ঠিকানা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুধু শিক্ষার চর্চা ও শিক্ষার গবেষণা থাকবে। যদি তাই থাকে, তবে আগামীর বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে ইনশাআল্লাহ।
শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষা যেহেতু জাতির মেরুদণ্ড, এ জায়গায় বেশি আঘাত দেওয়া হয়েছে। উদ্দেশ্যহীন মানহীন একটা শিক্ষাব্যবস্থা দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা বাস্তবজীবনে এ জাতির কমই প্রয়োজনে আসছে। শিক্ষায় কোনো গবেষণা নেই, চর্চা নেই, উৎকর্ষ নেই, নৈতিকতা নেই, দুনিয়ার সাথে কোনো মিল তাল নেই। সবকিছুকে একেবারে তছনছ করে দিয়েছে।
৭১-এর প্রসঙ্গ টেনে ড. শফিকুর রহমান বলেন, ৭১-এ একটা স্বাধীনতা এসেছিল। এ জাতি এনেছিল। কিন্তু স্বাধীনতার মর্মবাণী ডুকরে ডুকরে কেঁদেছে। স্বাধীনতার ফসল জনগণের পকেটে এবং ঘরে ওঠেনি। একটা গোষ্ঠী এটাকে হাইজ্যাক করেছিল। আরেকটা দেশের হাতে এটা তুলে দিলেছিল। তার জ্বলন্ত প্রমাণ, এই ২৪-এর ১৬ ডিসেম্বর। পাশের দেশের প্রধানমন্ত্রী, তিনি বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা দিতে গিয়ে ভারতীয় সৈনিক-সেনাপতিদের দিয়েছেন এবং বলেছেন এটা ভারতের বিজয় দিবস।
যারা স্বাধীনতার চেতনার কথা বলেন, বেশি বেশি বলেন, তারা এখন চুপ কেন? তাহলে কি আপনারা এটাকে বাংলাদেশের বিজয় স্বীকার করছেন না? আর যদি বিজয় স্বীকার করেই থাকেন, তাহলে প্রতিবাদ করেননি কেন? আসল রূপ তাদের প্রকাশ হয়ে গেছে। কারণ তারা তাদের মাথা ইজারা দিয়ে রেখেছে পাশের দেশে। এদের মাথা নিজেদের মাথা নয়। ওইখান (ভারত) থেকে রিমোর্ট কন্ট্রোলে সাড়ে ১৫ বছর যাই বলা হয়েছে, তারা তাই করেছে।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উদ্বোধন ঘোষণা করেন রাজশাহী মহানগর ছাত্রশিবিরের সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদ আলী রায়হানের পিতা মো. মুসলেহ উদ্দিন।
উদ্বোধন ঘোষণাকালীন জুলাই বিপ্লবে হওয়া শহীদ আবু সাঈদ, ফয়সাল মাহমুদ শান্ত, ওয়াসিম, উসমানসহ শহীদ পরিবারের সদস্যরা, আওয়ামী আমলের অত্যাচারে আহত ও গুম হওয়া ভাইদের পরিবারের সদস্যরা স্টেজে উপস্থিত ছিলেন।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল, সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, মাওলানা শামসুল ইসলাম ও ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতিরা।