চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শেখ হাসিনার ছবি ও নৌকা প্রতীক ভাঙতে বাঁধা দেওয়া এবং সাংবাদিক হেনস্তার প্রতিবাদে মশাল মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে মশাল মিছিল হাতে এ প্রতিবাদ শুরু হয়। এরপর রাত ১০টার দিকে উদ্যানের এখানে গিয়ে মিছিল শেষ হয়।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘ফাঁসি ফাঁসি, ফাঁসি চাই, খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘একটা একটা লীগ ধর, ধইরা ধইরা জেলে ভর’, ‘থাকবে না রে, থাকবে না; ফ্যাসিবাদের নিশানা’, ‘অ্যাকশন টু অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘জুলুম না ইনসাফ, ইনসাফ ইনসাফ’, ’দালালদের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
এ সময় ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, ‘স্বৈরাচারের প্রেতাত্মারা এই ক্যাম্পাসে এখনও ঘোরাফেরা করছে। তারা ক্যাম্পাসে শৃঙ্খলা নষ্টের চেষ্টা করছে। এই ক্যাম্পাসে স্বৈরাচারীদের কোন নিশানা থাকবে না। যারা গতকাল শেখ হাসিনার ছবি, নৌকা প্রতীক ভাঙতে দেয়নি, তাদেরকে অচিরেই হল থেকে বের করতে হবে। সেই সঙ্গে সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও ফোন কেড়ে নিয়েছে যারা, প্রশাসনকে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।’
আরবি বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী মশিউর রহমান সোহাগ বলেন, ‘সারাদেশে ফ্যাসিবাদের নিশানা মোছার অংশ হিসেবে চবির শেখ হাসিনা হলের স্বৈরাচারী হাসিনার ছবি ও নৌকা প্রতীক ভেঙে ফেলতে চাইলে হাসিনার প্রেতাত্মারা আমাদেরকে বাঁধা দেয়। একইসাথে তারা সাংবাদিকদের ওপর হামলা করে। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং এসব ছাত্রীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।’
আইন বিভাগের সাব্বির হোসেন রিয়াদ বলেন, ‘গতকাল ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়ি ভাঙাকে কেন্দ্র করে সারাদেশে ফ্যাসিবাদের নিশানা মুছে দেওয়ার অংশ হিসেবে চবিতে শেখ হাসিনার ছবি ও নৌকা প্রতীক ভাঙার কর্মসূচি ছিল। এতে বাঁধা দিয়েছে যারা, তারা স্বৈরাচারের (শেখ হাসিনা সরকারের) প্রেতাত্মা। এসব উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থী আমাদের ভাইদের ওপর হামলা করেছে, সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেছে। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে সহকারী প্রক্টর নাজমুল হোসাইন বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের কোন নিশানা এই ক্যাম্পাসে আমরা রাখবো না। তবে, সে দিন রাতে যে বা যারা শিক্ষকদের দিকে তেড়ে এসেছেন, তাদের গায়ে হাত তুলেছেন, হেনস্তা করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নেওয়া না নিলে আমরা কেউ প্রক্টরিয়াল বডির দায়িত্ব পালন করবো না।’
উল্লেখ্য, বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাত ১১টার দিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল ছাত্র শেখ হাসিনার ম্যুরাল ও নৌকা প্রতীক ভাঙার চেষ্টা করলে হলের ছাত্রীরা হলের পশ্চিম দিকের গেইট ভেঙে বেরিয়ে এসে ছাত্রদের ইট-পাথর ছুঁড়ে ধাওয়া করে। এতে কয়েকজন ছাত্র আহত হন। একই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ও আবাসিক শিক্ষকদের গালিগালাজ করেন। উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করে তাদের দিকেও তেড়ে যান শেখ হাসিনা হলের ছাত্রীরা। এছাড়াও ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা দেন ছাত্রীরা। এ সময় একজন সাংবাদিকের মোবাইল ফোনও ছিনিয়ে নেন তারা। ছাত্রীদের কয়েকজন তেড়ে এসে একজন সাংবাদিকের গায়ে হাত তোলেন।