দেখতে দেখতে আটটি বছর পেরোলেও চট্টগ্রামে স্কুলছাত্রী তাসফিয়া আমিন হত্যা মামলার কূলকিনারা হয়নি। শুরু থেকে পুলিশের তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) আলোচিত এ মামলার তদন্ত নিয়ে কাজ করছে।
নগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) এবং পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এ মামলার তদন্ত করে মৃত্যুর কারণ হিসেবে ‘আত্মহত্যা’ উল্লেখ করেছিল। তবে তাসফিয়ার পরিবারের দাবি, তিন সংস্থার কেউই নিরপেক্ষ তদন্ত করেনি।
তাসফিয়ার মা নাঈমার দাবি- তিন সংস্থার কেউই নিরপেক্ষ তদন্ত করেনি। সবাই পানিতে ডুবে মারা গেছে বলছে। কিন্তু শরীরে নির্যাতনের কোনো ব্যাখ্যা কেউ দিতে পারছে না।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, তাসফিয়া হত্যা মামলায় তৃতীয় সংস্থা হিসেবে গত ৩০ জানুয়ারি সিআইডি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছিল। সেই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ১২ পৃষ্ঠার নারাজি আবেদন দাখিল করেছে ভিকটিমের পরিবার।
আদালত সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের আলোচিত স্কুলছাত্রী তাসফিয়া আমিনের হত্যা মামলায় সিআইডির চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দাখিল করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইব্রাহিম খলিলের আদালতে নারাজি আবেদন দাখিল করেন মামলার বাদী ও নিহত তাসফিয়ার বাবা মো. আমিন। তিনি এইদিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন না।
পতেঙ্গা থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) মো. রহমান বলেন, তাসফিয়া হত্যা মামলায় তৃতীয় সংস্থা হিসেবে গত ৩০ জানুয়ারি সিআইডি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছিল। সেই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ১২ পৃষ্ঠার নারাজি আবেদন দাখিল করেছে ভিকটিমের পরিবার। মামলার বাদী আদালতে উপস্থিত না থাকায় বিজ্ঞ বিচারক আগামী ২৩ মার্চ শুনানির দিন ধার্য করেছেন। বাদীর পক্ষে কোন আইনজীবী নারাজি দাখিল করেছেন, তা জানাতে পারেননি তিনি।
চট্টগ্রামের সানশাইন গ্রামার স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল তাসফিয়া। বাংলাদেশ এলিমেন্টারি স্কুলের ছাত্র আদনান মির্জার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল তার। যেটি তাসফিয়া আমিনের পরিবার পছন্দ করত না। এজন্য তাকে বাসা থেকে বের হতে দেওয়া হতো না।
২০১৮ সালের ১ মে কাউকে না বলে বাসা থেকে বের হয়ে যায় তাসফিয়া আমিন। বন্ধু আদনান মির্জার সঙ্গে গোল পাহাড় মোড়ের চায়না গ্রিল রেস্টুরেন্টে যায় সে। সেখান থেকে সন্ধ্যা ৬টা ৩৭ মিনিটে বের হয়ে একা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় উঠে তাসফিয়া। এরপর থেকে তার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি।
পরদিন অর্থাৎ ২ মে পতেঙ্গায় নেভাল একাডেমির কাছে কর্ণফুলী নদীর তীররক্ষা পাথরের ওপর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
৩ মে দুপুরে আদনান মির্জাকে প্রধান আসামি করে ছয়জনের বিরুদ্ধে পতেঙ্গা থানায় হত্যা মামলা করেছিলেন নিহতের বাবা মোহাম্মদ আমিন। একই দিন সন্ধ্যায় নগরের মুরাদপুর থেকে তাসফিয়ার বন্ধু আদনান মির্জাকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।
সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়, তার শরীরে ১১টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। দুই চোখ মারাত্মকভাবে থ্যাঁতলানো। ডান চোখের ভ্রু ক্ষতবিক্ষত। মৃত্যুর আগে নাক দিয়ে বের হয়েছে ফেনা। মূলত, এই আঘাতের চিহ্ন থেকেই তাসফিয়ার মৃত্যুর কারণ নিয়ে রহস্য ঘনীভূত হয়। সেই কারণ বের করতে না পারলেও ডিবি-পিবিআই ও সিআইডি- তিন সংস্থার প্রতিবেদনেই বলা হয়, প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে মা-বাবার শাসনের ভয়ে ঘটনার দিন বাসায় না গিয়ে কর্ণফুলী নদীর মোহনা এলাকায় যায় তাসফিয়া। পরে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে। সবশেষ গত ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে সিআইডি।