চিরবৈরী দুই প্রতিবেশী ভারত ও চীনের মাঝে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে। এর সর্বশেষ দৃষ্টান্ত দেখা গেছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের বিষয়ে করা ‘‘ইতিবাচক’’ মন্তব্যে; যার প্রশংসা করেছে চীন। বেইজিং বলেছে, ‘‘ড্রাগন-হস্তি নৃত্য’’ সহযোগিতার বাস্তবায়ন করাই চীন ও ভারতের একমাত্র সঠিক পছন্দ।
সোমবার বেইজিংয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ইতিবাচক মন্তব্যের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘চীন ও ভারতের মধ্যে ২০০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিনিময়ের ইতিহাসে, বন্ধুত্বপূর্ণ বিনিময় এবং পারস্পরিক শিক্ষাই মূলধারা, যা বিশ্ব সভ্যতা এবং মানব অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।’’
তিনি বলেন, বৃহত্তম দুই উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উভয়পক্ষের বর্তমান সাধারণ কাজ হল তাদের নিজ নিজ দেশের উন্নয়ন এবং পুনরুজ্জীবন অর্জনের জন্য প্রচেষ্টা চালানো। তাদের পরস্পরকে বোঝা, সমর্থন এবং অর্জন করা উচিত। এটি দুই দেশের ২ দশমিক ৮ বিলিয়নেরও বেশি মানুষের মৌলিক স্বার্থ, আঞ্চলিক দেশগুলোর সাধারণ প্রত্যাশা, বিশ্বব্যাপী দক্ষিণের অসামান্য বৃদ্ধির ঐতিহাসিক প্রবণতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এবং বিশ্ব শান্তি, স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য সহায়ক। পারস্পরিক অর্জনের অংশীদার হওয়া এবং ‘ড্রাগন ও হাতির নৃত্য’ বাস্তবায়ন করা চীন ও ভারতের জন্য একমাত্র সঠিক পছন্দ।’’
যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক পডকাস্টার ও কম্পিউটার বিজ্ঞানী লেক্স ফ্রিডম্যানের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কথোপকথনের পর বেইজিং এসব মন্তব্য করেছে। পডকাস্টে মোদি বলেছিলেন, ‘‘পূর্ব লাদাখে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মাঝে ২০২০ সালের সংঘাতের ফলে সৃষ্ট উত্তেজনা হ্রাসের লক্ষ্যে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তার সাম্প্রতিক আলোচনার পর ভারত-চীন সীমান্তে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরেছে।’’
ভারতের এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার দ্বিপাক্ষিক সব মতপার্থক্যকে বিরোধে রুপ না দেওয়া নিশ্চিত করার দিকে মনোনিবেশ করছে। লেক্স ফ্রিডম্যানকে তিনি বলেন, এসব পার্থক্য যাতে বিরোধে রূপান্তরিত না হয় তা নিশ্চিত করার দিকেই আমাদের মনোযোগ। এটা নিয়ে আমরা সক্রিয়ভাবে কাজ করছি। বিচ্ছিন্নতার পরিবর্তে আমরা কথোপকথনের ওপর জোর দিয়েছি। কারণ কেবল কথোপকথনের মাধ্যমে আমরা একটি স্থিতিশীল, পারস্পরিক সহযোগিতামূলক সম্পর্ক তৈরি করতে পারি; যা উভয় দেশের সর্বোত্তম স্বার্থের জন্য কাজ করবে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, অক্টোবরে রাশিয়ার কাজানে প্রধানমন্ত্রী মোদি ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মাঝে সফল বৈঠক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি ও উন্নয়নের জন্য কৌশলগত দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করেছে।
চার বছরেরও বেশি সময় পর গত বছরের নভেম্বরে পূর্ব লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় (এলএসি) টহল শুরু করে ভারতীয় ও চীনা সেনারা। ২০২০ সালের মে-জুনে প্যাঙ্গং হ্রদ এবং গালওয়ান উপত্যকায় উভয়পক্ষের সৈন্যদের সংঘর্ষের পর থেকে গত প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে পূর্ব লাদাখের ওই দুটি অঞ্চলে টহল বন্ধ ছিল।
চীনা মুখপাত্র বলেছেন, চীন দুই নেতার গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ বোঝাপড়া বাস্তবায়নের জন্য ভারতের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭৫তম বার্ষিকীকে স্থিতিশীল সম্পর্ক গড়ার একটি সুযোগ হিসাবে গ্রহণ করছে বেইজিং।