আগামীর বাংলাদেশে রাজনীতি ও নির্বাচনের ক্ষেত্রে মুজিববাদ এবং ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের কোনো স্থান হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। এই ব্যাপারে রাজনৈতিক ঐকমত্যে আসতে বিএনপিসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী দলগুলোর প্রতিও আহ্বান জানান তিনি।
বুধবার (১৯ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর ইস্কাটনের লেডিস ক্লাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সম্মানে বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে নাহিদ এ কথা বলেন।
এনসিপির এই আহ্বায়ক বলেন, আমরা মনে করি, মুজিববাদের বিরুদ্ধে আমাদের যে লড়াই হয়েছিল, গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল- সেই লড়াইয়ের স্পিরিটটাকে আমরা ধারণ করব। ইদানীং একটা কথা বলা হচ্ছে, ইনক্লুসিভ ইলেকশন। আমি মনে করি, ইনক্লুসিভ ইলেকশন হওয়ার মতো, বাংলাদেশের জনগণকে প্রতিনিধিত্ব করার মতো রাজনৈতিক দল বা পক্ষ বাংলাদেশ রয়েছে। ৫ আগস্ট বাংলাদেশের জনগণ যে শক্তিকে পরাজিত করেছে, তারা মুজিববাদ এবং ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে আসলে বিদায় করেছে। ফলে বাংলাদেশের সামনের ভবিষ্যৎ রাজনীতি-নির্বাচন, সেখানে আসলে সেই মুজিববাদী রাজনীতির কোনো স্থান আসলে হবে না। তাছাড়া একটা বিচার প্রক্রিয়া যখন চলমান আছে, বিচারের আগে তো সেই প্রশ্নই আসে না। আমাদের জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষ থেকে সেই আহ্বানটা আমরা রাখব, এই বিষয়েও আমরা যাতে একটা রাজনৈতিক ঐকমত্যে আসতে পারি।
তিনি বলেন, আমরা সব সময় এমন একটি বাংলাদেশ কামনা-প্রত্যাশা করেছি, যেখানে রাজনৈতিক শক্তিগুলো তাদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকবে, নীতিগত পার্থক্য থাকবে, সমালোচনা থাকবে; কিন্তু আমরা সবাই দেশ ও জনগণের স্বার্থে একসাথে বসতে পারব, আলোচনা করতে পারব। যখনই রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে বিরোধ কিংবা বসার মতো পরিবেশ দেশে থাকে না, রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে যদি অনৈক্য তৈরি হয়, সেখানেই অরাজনৈতিক শক্তিগুলো আসলে সুযোগ সন্ধানী হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের ইতিহাসে আমরা দেখেছি, বিভিন্ন সময় এটা হয়েছে। সেই জায়গা থেকে আমরা মনে করি যে- বাংলাদেশে এখনো ফ্যাসিবাদী শক্তি, তার যে সমর্থিত নানা ধরনের দোসর, তারা সমাজের নানান জায়গায় রয়ে গেছে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা যেটা বলেছি, দেশের সেই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থাটাকে আমাদের বদলাতে হবে। আগামীর বাংলাদেশের নেতৃত্বে যাদের হাতেই যাক না কেন, পরিবর্তিত সেই ব্যবস্থার প্রতি সবার সেই অঙ্গীকারটা প্রয়োজন। আমরা মনে করি, এখন আমাদের মধ্যে যে পরিবেশ-পরিস্থিতি রয়েছে, সেখানে রাজনৈতিক ঐক্যটা থাকবে। রাজনৈতিক ঐক্যের অভাব হলে সেখানে অরাজনৈতিক শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে এবং এখানে আমলাতন্ত্র, লুটেরা মাফিয়ারা রয়েছে, বৈদেশিক ষড়যন্ত্রকারী বিভিন্ন পরাশক্তিও রয়েছে। বাংলাদেশকে দীর্ঘদিন নতজানু পররাষ্ট্রনীতির অধীনে রাখার চেষ্টা করেছে বিগত সরকার। আমাদের প্রত্যাশা, সামনের বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম, গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ হবে। সেই জায়গায় যেকোনো পরিস্থিতিতে জাতীয় নাগরিক পার্টি বাংলাদেশে অবশ্যই জাতীয় ঐক্যের জায়গা ধরে রেখে কাজ করবে। তিনি বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি একটি নতুন রাজনৈতিক দল। গণঅভ্যুত্থান থেকে উঠে আসা তরুণই আমরা এই দলটা পরিচালনা করছি, নেতৃত্ব দিচ্ছি। সেই জায়গায় বাংলাদেশে বিদ্যমান যে রাজনৈতিক দলগুলো আছে, যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আমাদের সাথে ছিল এবং অভ্যুত্থানে সরাসরিভাবে সহায়তা ও অংশগ্রহণ করেছে- তারাও আমাদের শুভেচ্ছা ও স্বাগতম জানিয়েছে এবং নানানভাবে আমাদের সহযোগিতা করছে একটি নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে গড়ে উঠতে। সেই জায়গা থেকেও আমি এনসিপির পক্ষ থেকে বিএনপিসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই।
ইফতার মাহফিলে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।