কক্সবাজারের টেকনাফে সমুদ্রে নৌকাডুবিতে নিহত বিজিবি সদস্য বেলাল হোসেনের গ্রামের বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছে গোটা এলাকা। বেলাল হোসেন গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে ছুটি পেয়েছিলেন। ইচ্ছে ছিল স্বজনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করার। বেলাল গ্রামে ফিরলেন ঠিকই, তবে জীবিত নয় মৃত।
গত শুক্রবার (২১ মার্চ) কক্সবাজারের টেকনাফে বঙ্গোপসাগরে রোহিঙ্গাদের নিয়ে ডুবে যাওয়া একটি নৌযান উদ্ধারে গিয়ে সমুদ্রে তলিয়ে যান বেলাল। দুদিন পর রোববার (২৩ মার্চ) দুপুরে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ গোলারচর এলাকায় সৈকতে মরদেহ ভেসে ওঠে। সোমবার (২৪ মার্চ) তার গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় বেলালকে।
নিহত বিজিবি সদস্য বেলাল হোসেন কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার দারোরা ইউনিয়নের কাজিয়াতল গ্রামের বজলুর রহমানের ছেলে। তিনি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবির) সেপাই পদে কর্মরত ছিলেন। নিহত বেলাল হোসেনের ৮ বছরের ও দেড় বছরের দুই কন্যা সন্তান রয়েছে।
নিহত বেলালের ভাই নাজমুল হাসান বলেন, শনিবার বিকেলে বিজিবি থেকে আমাদের বাড়িতে দুজন লোক আসেন। এসে বলেন যে আমার ভাই বেলাল হাসান শুক্রবার রাতে কক্সবাজারের টেকনাফে রোহিঙ্গা উদ্ধার করতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন। তাকে এখনো পাওয়া যায়নি। রোববার দুপুরে আমরা কুমিল্লা বিজিবি ক্যাম্পে যাওয়ার পরপর সেখানে খবর আসে রাখাইন এলাকায় আমার ভাইয়ের লাশ পাওয়া গেছে। প্রশ্ন হলো আমার ভাই শুক্রবার নিখোঁজ হয়েছেন। আমাদের জানানো হয়েছে শনিবার বিকেলে। এর কারণ কী? এর পিছনে কোন রহস্য আছে কি না এটা খতিয়ে দেখা দরকার।
নিহতের বাবা বজলুর রহমান বলেন, আমার ছেলের মৃত্যুটা রহস্যজনক মনে হচ্ছে। মনে হয় কিছু গোপন করা হয়েছে।
নিহতের স্ত্রী রোকসানা খনম অশ্রুসজল চোখে বলেন, কথা ছিল সে ২৫ তারিখে ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসবে। বাড়িতে ঈদ করবে। এখন আমাকে অথৈ সাগরে ভাসিয়ে সে চিরকালের জন্য ছুটি নিয়ে চলে গেছে না ফেরার দেশে। দুটি অবুঝ শিশু সন্তান নিয়ে আমি এখন কোথায় দাঁড়াব?
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আব্দুর রহমান বলেন, নিহতের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। সরকারিভাবে কোনো নির্দেশনা এলে আমরা তার পরিবারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করব। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার (২১ মার্চ) কক্সবাজারের টেকনাফ এলাকার বঙ্গোপসাগরে রাখাইন এলাকা থেকে রোহিঙ্গাদের বহনকারী একটি নৌযান টেকনাফ এলাকায় ডুবে যায়। খবর পেয়ে সমুদ্র সৈকতের পাশে কর্তব্যরত বিজিবির সদস্যরা স্থানীয় জেলেদের সঙ্গে নিয়ে সেখানে যান। পরে ২৪ জন রোহিঙ্গাকে জীবিত উদ্ধার করেন। উদ্ধারকাজ চলাকালে সমুদ্র উত্তাল ছিল। এ সময় বিজিবির সদস্য বেলাল হোসেন পা পিছলে সাগরে পড়ে যান। দুই দিন তার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। পরে রোববার (২৩ মার্চ) দুপুর সোয়া ১২টার দিকে টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের জিরো পয়েন্ট সৈকত এলাকায় মরদেহ ভেসে আসে।