ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) ভয়াবহ বিমান হামলায় হতাহত লোকজনের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালগুলোকে জরুরি নির্দেশনা দিয়েছে লেবাননের জনস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সেই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, জরুরি নয়— এমন সব অপারেশন যে হাসপাতালগুলো বাতিল করে।
এছাড়া রোগীদের চিকিৎসার জন্য দেশের ক্লিনিকগুলোর মালিকদেরও দ্রুত প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সোমবার স্থানীয় সময় সকালের পর পর লেবানের দক্ষিণাঞ্চলীয় কয়েকটি শহর ও গ্রামে ব্যাপক আকারে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। হামলায় কমপক্ষে ১০০ মানুষ নিহত এবং চার শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন।
লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলি বিমান থেকে শত শত স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিবিসির একজন প্রতিনিধি। লেবাননের সাথে ইসরায়েলের চলমান উত্তেজনায় এখন পর্যন্ত সোমবারের হামলাই সবচেয়ে তীব্র বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্তের ওপারেই ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চল। আইডিএফের এক কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, সোমবারের হামলার আগে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের স্থানীয় বেসামরিক বাসিন্দাদের মোবাইল ফোনে সতর্কবার্তা দিয়েছিল আইডিএফ। সেই সতর্কবার্তায় তাদেরকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হয়েছিল।
লেবাননের একজন মন্ত্রী আইডিএফের এই বার্তাকে ‘মানসিক যুদ্ধ’ বলে উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক বার্তায় বলেছেন, “উত্তর ইসরায়েলের নাগরিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের হামলা অব্যাহত থাকবে।”
প্রসঙ্গত, বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সশস্ত্র ইসলামি রাজনৈতিক গোষ্ঠী হিজবুল্লার প্রধান ঘাঁটি লেবানন। দেশটির সরকারে এই গোষ্ঠীর কোনো প্রতিনিধি নেই, তবে ক্ষমতার প্রকৃত নিয়ন্ত্রক তারাই। এই গোষ্ঠীটি ইরানের মদদপুষ্ট।
১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় হিজবুল্লাহ। প্রতিষ্ঠান পর থেকেই ইসরায়েলের সঙ্গে দ্বন্দ্ব-সংঘাত লেগে আছে গোষ্ঠীটির। তবে এর উল্লম্ফণ ঘটেছে গত বছর ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর থেকে। ওই হামলার পর হামাসের প্রতি সংহতি জানিয়ে ইসরায়েরের উত্তরাঞ্চলে রকেট-ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া শুরু করে হিজবুল্লাহ। জবাবে ইসরায়েলও সমান তালে হামলা অব্যাহত রাখে।
গত সপ্তাহে লেবাননের সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সদস্যদের ব্যবহার করা হাজার হাজার পেজার ও ওয়াকি-টকিতে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের এই ঘটনায় লেবাননে ৪০ জনের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে; যাদের মধ্যে হিজবুল্লাহর অন্তত ১৬ সদস্য রয়েছেন। এই বিস্ফোরণের জন্য ইসরায়েলকে ব্যাপকভাবে দায়ী করছে হিজবুল্লাহ।
সশস্ত্র গোষ্ঠীটির যোগাযোগের যন্ত্রে বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মাঝেই সোমবার লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলীয় একাধিক শহরে একযোগে বিমান হামলার ঘটনা ঘটল।