ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেছেন, ইসলামপন্থি দলগুলোর ঐক্য হলে ইসলামই হবে দেশের একমাত্র চাবিকাঠি। জালিমদের হাত থেকে আল্লাহভীরু নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা সময়ের অনিবার্য দাবি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রত্যেকটি নাগরিকের অধিকার আদায়ের জন্য ৫ আগস্ট জীবনবাজি রেখে হাজারো মায়ের বুক খালি করে আমরা দেশকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করেছি। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা দ্বিতীয়বারেরমতো দেশ স্বাধীন করেছি। এ দেশ আমার। এ দেশ আপনার।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলা শাখার উদ্যোগে স্থানীয় দুর্গাপুর স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে আয়োজিত গণসমাবেশে বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টায় তিনি এসব কথা বলেন।
মুফতি ফয়জুল করীম বলেন, চোর-দুর্নীতিবাজ, ডাকাত দিয়ে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্রগঠন করা সম্ভব নয়। যার ভেতরে ইনসাফ নেই, যে দুর্নীতিবাজ, লুটেরা, ধর্ষক, জালিম সেই ব্যক্তি কীভাবে ইনসাফভিত্তিক সমাজ উপহার দেবে? কাজেই জালিম ও চোর-ডাকাতদের হাত থেকে ইসলামপন্থিদের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশে ইসলামী অনুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
তিনি বলেন, ঢাবি-বুয়েট আমাদের কিন্তু পড়ার অধিকার সবার। দলমত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশ সবার। মুসলিমদের পাশাপাশি সব ধর্মের মানুষ এখানে নিরাপদ থাকবে—এটাই স্বাভাবিক। সংখ্যালঘুদের নিয়ে যারা রাজনীতি করে তারাই হিন্দুদের মন্দিরে আক্রমণ চালায়।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির বলেন, ৫ আগস্ট যে বৈষম্য ও জুলুমের বিরুদ্ধে বিজয় এনেছি পরবর্তী সময় এসে আমরা দেখলাম সেই আগের মতোই দখলদারি, চাঁদাবাজি, ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করেছে একটি গোষ্ঠী। এসব বন্ধ করতে হবে। সবাই মিলে একটি কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ ছাড়া ভাগ্যহত জনতার ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হবে না। স্বাধীনতা অর্থবহ হবে না। রাষ্ট্র সংস্কার করে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সময়ের দাবি। কিন্তু ঘুরেফিরে দুর্নীতিবাজদের ক্ষমতায় আনলে জনগণের দুঃখ-দুর্দশার অন্ত থাকবে না।
তিনি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতে করতে হবে। এতে কালো টাকার ছড়াছড়ি বন্ধ হবে। জনগণ ভোট দেবে মার্কাতে কোনো ব্যক্তিকে নয়। রাষ্ট্রেরও হাজার হাজার কোটি টাকা বেঁচে যাবে। চাঁদাবাজ ও দখলদারদের কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। এ দেশ আমাদের সবার। সব ধর্মের সব নাগরিকের স্ব-স্ব অধিকারের পূর্ণ নিশ্চয়তা দিতে হবে।
ইসলাম ক্ষমতায় আসলে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার গ্যারান্টি দিয়ে তিনি আরও বলেন, ইসলাম ছাড়া মানবতার মুক্তি নাই। ইসলামী অর্থনীতি চালু হলে ঘুষ থাকবে না, লুটপাট হবে না। আদর্শিক পরিবর্তন ছাড়া গণমানুষের কাঙ্ক্ষিত মুক্তি অর্জন সম্ভব নয়। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান একক কোনো গোষ্ঠীর ছিল না, এ অভ্যুত্থান সব দলের। সব ছাত্র-জনতার। এককভাবে কোনো দল বা ব্যক্তি গণহত্যাকারী মাফিয়াগোষ্ঠীকে ক্ষমা করার অধিকার রাখে না। বিগত ১৬ বছরে হাজার হাজার মায়ের বুক খালি হয়েছে, অনেক বোনকে করা হয়েছে বিধবা, বাবার ছায়া থেকে বঞ্চিত হয়ে শত শত শিশুর আর্তচিৎকার আমরা এখনও শুনি। ১৬ বছরের নারকীয় তাণ্ডবের বিচার ফায়সালা না হওয়া পর্যন্ত তাদেরকে ক্ষমা করার অধিকার কারো নেই।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা মকবুল হোসাইন, কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ মুহাম্মদ জয়নাল আবদিন, জেলা সভাপতি হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ মাকসুদুর রহমান, সহসভাপতি মাওলানা ইয়াসিন রশেদ সানী, সেক্রেটারি শাহজামাল গাজী সোহাগ, উপজেলা সভাপতি ডা. মুহাম্মদ সফিউল্লাহ, গাজী জহিরুল ইসলাম প্রমুখ।