দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ অন্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, অফিসের শৃঙ্খলা ভঙ্গ, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচারের অভিযোগে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরের দুই উপপরিচালক (ট্রাফিক) মনিরুল ইসলাম ও (প্লানিং) কবির খানকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে।
বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকালে বন্দর পরিচালক রেজাউল করিম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মনিরুল ইসলাম ছাত্র থাকাকালে ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন বলে পরিচয় দিতেন। এই পরিচয়ে তিনি লাগামহীন দুর্নীতি করে বার বার পার পেয়েছেন। তার অত্যাচারে অফিসের সবাই ভয়ে থাকতেন। তিনি ২০২২ সালের ১ অক্টোবর যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরে যোগ দেন।
সেই সময় থেকেই তিনি ভারত থেকে বাংলাদেশে আমদানি করা পচনশীল পণ্য ওজনে ডিজিটাল কারচুপি শুরু করেন। ভারত থেকে সেই সময় প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১৫০ ট্রাক পচনশীল পণ্য যেমন, মাছ, ফল, কাঁচামরিচ, পেঁয়াজ, টমেটো, আলু ইত্যাদি আমদানি হতো।
কাস্টমসের কতিপয় কর্মকর্তা ও কতিপয় অসাধু সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ীর যোগসাজশে ওজন স্কেলে ডিজিটাল কারচুপি করে স্কেলের সফটওয়্যারের আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে প্রতি ট্রাকে প্রতিদিন দুই থেকে তিন টন পণ্যের ওজন কম দেখানো হতো।
প্রতি টন পণ্যের শুল্কায়ন ছিল ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত। সেই হিসেবে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিতো এই চক্র। আর ফাঁকি দেওয়া সেই রাজস্ব তিনটি জায়গায় আনুপাতিক হারে বণ্টন হতো। এভাবে প্রতি মাসে ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিত চক্রটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মনিরুল ইসলাম বেনাপোল থেকে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া টাকার একটি অংশ পৌঁছে দিতেন ঢাকার হেড অফিসের উপপরিচালক কবির খানের কাছে। তাদের যোগসাজশে এই চক্র ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল। কিন্তু তাদের সেই অপকর্ম প্রকাশ হয়ে পড়লে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
বেনাপোল বন্দরের পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, বাংলাদেশ স্থলবন্দরের চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক পত্রে গত ২১ আগস্ট বরখাস্তের বিষয়টি জানানো হয়। ওজন স্কেলে কারচুপির মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন, দুর্নীতি, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে গ্রুপিং, অফিসিয়াল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচার ইত্যাদির কারণে উপপরিচালক (ট্রাফিক) মনিরুল ইসলাম ও উপপরিচালক (প্লানিং) কবির খানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পেয়েছি।